: বাবা, কি কর?
: এইতো আম্মু, কাজ করছি।
: জানো, স্কুলে স্যার আজকে একটা নতুন হোমওয়ার্ক দিয়েছে।
: কি?
: স্যার বলেছে যে জীবনের লক্ষ্য নিয়ে বিদেশী বন্ধুর কাছে চিঠি লিখতে হবে।
: তাই নাকি! তোমার আবার বিদেশী বন্ধু হল কবে?
: এখনও হয়নি, চিঠি লিখলে পরে হবে।
: হা হা, তা তোমার জীবনের লক্ষ্য কি?
: সেটা নিয়েই তো চিন্তায় আছি
: তুমি কি ডাক্তার হতে চাও?
: সবাইই তো ডাক্তার হতে চায়। জিনিয়া বলছে সে ডাক্তার হবে। অন্তরাও।
: কেন, ডাক্তার ছাড়া কি আর কিছু হবার নেই? ডাক্তারই হতে হবে কেন? তুমি কি মীনা কার্টুনের মত সিনেমার নায়িকা হতে চাও?
: উহু, না
: কেন নায়িকা হওয়া তো ভাল। তোমাকে টিভিতে দেখাবে। বিলবোর্ডগুলাতে তোমার ছবি থাকবে। তোমাকে কত লোক চিনবে smile emoticon
: তুমি না সেদিন বললে যে নতুন জামাটাতে আমাকে একেবারে প্রিন্সেস এর মত লাগছে। তাহলে আবার নতুন করে নায়িকা হব কেন!
: তাহলে এক কাজ কর, তুমি জার্নালিস্ট হও।
: অইযে টিভিতে সাংবাদিক আছে, ওদের কথা বলছ? খবর নেওয়ার জন্য ক্যামেরা হাতে দৌড়ে বেড়ায়।
: হ্যা, কত কত জায়গায় যায়। তুমি না অনেক ঘুরতে যেতে চাও, সাংবাদিক হলে সারাদিন ঘুরে বেড়াবা।
: উমমম
: কি পছন্দ হলনা? তাহলে তুমি প্রধানমন্ত্রী হও।
: প্রধানমন্ত্রী! সেতো অনেক বড় মানুষ। আমি পারব না।
: পারবেনা কেন ? এইটা তো সোজা, তোমাকে অবশ্য অনেক মানুষের সাথে মিশতে হবে, কথা বলতে হবে। ওদের ভাল মন্দ বুঝতে হবে। কোথায় কিভাবে কি করলে সবাই মিলে ভাল একটা কাজ করা যায় সেটা ভাবতে হবে।
: থামোতো, সেই কতক্ষন ধরে কি কি সব বলেই যাচ্ছ। হোমওয়ার্কে এগুলো কিভাবে লিখব!
: আচ্ছা, আগে একটা ঠিক করে ফেল, তারপরেরটুকু দুজন মিলে বের করে ফেলব।
: নাহ একটাও ভাল লাগছে না। মানে কি লিখব সেটাই তো বুঝতেছিনা।
: তুমি আগে দেখ কোনটা তোমার ভাল লাগতেছে। নিচতলার শান্তা কি লিখেছে ?
: স্কুল থেকে আসার সময় জিজ্ঞেস করেছিলাম। বলতেছিল ও নাকি ইঞ্জিনিয়ার হবে।
: (পাশের রুম থেকে হোম মিনিষ্টারের হুঙ্কার) হাহ! তোমার আর ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে না। বাসায় এক ইঞ্জিনিয়ার নিয়েই পারিনা, আরেকজন আসলে তো কথাই নেই। দেখা যাবে বাবার মত মেয়েও সারাদিন কম্পুটার নিয়ে পরে থাকবে।
: আহা, ইঞ্জিনিয়ার হওয়া ভাল তো। ওরা যদি ভাল ভাল বাড়ি গাড়ি না বানাত তাহলে থাকতে কোথায়, চড়তে কি! আর সব ইঞ্জিনিয়ার তো কম্পিউটারের সামনে বসে থাকে না। সে যাই হোক, আম্মু তুমিতো বিজ্ঞানীও হতে পার। নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করবে। সারা বিশ্বের মানুষ সেটা জানবে, কত্ত বড় হতে পারবে!
: আচ্ছা বাবা, সবাই বলে পড়াশুনা করে অনেক বড় হতে হবে। বড় হয়ে আসলে কি হবে ?
: বড় হয়ে অনেক বড় চাকরি করবে, ভাল জায়গায় থাকবে, আরাম আয়েশ করবে।
: আরাম আয়েশ করে কি হবে?
: আরামে থাকলে তুমি আরও বেশি কাজ করার শক্তি পাবে।
: সেটাতো বুঝলাম। কিন্তু এত এত কাজ করে হবে টা কি আসলে!
: তুমি কাজ করলে সেটা মানুষের অনেক উপকারে আসবে। সবাই মিলে তখন পৃথিবীটাকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
: পৃথিবী এগিয়ে গেলে কি হবে ?
: পৃথিবী এগিয়ে গেলে… ইয়ে, দেখতো আম্মু অই রুমে কি করছে… আমি খুঁজে বের করি পৃথিবী এগিয়ে গেলে কি হয়।
: বাবা তুমি না! কিছু না পারলে সবসময় এইরকম ইয়ে ইয়ে কর…