"We human being, always find a solution, maybe not today, but if you really want to solve a problem, there’s always a way" – Ma Yun @ Stanford, 2013

টিপ টিপ বৃষ্টি

by Md Imran Hasan Hira

আজ অফিসে সায়মা’র প্রথম দিন। সে অনেক আগের কথা। হালকা হালকা বৃষ্টি পড়তেছে। প্রথম দিনের ঝক্কি ঝামেলা শেষ করে সায়মা IPVision অফিস থেকে কেবল বের হবে। নাহ, ভুল করে আজকে ছাতাটা আনা হয়নি। সকাল বেলা তো কড়কড়ে রোদ ছিল, কে জানত এখন এইভাবে বৃষ্টি নামবে। বৃষ্টি একটু থামি থামি ভাব দেখিয়ে আবার অঝোড়ে পরতে শূরু করল।

ওয়েব টিম থেকে ইব্রাহীম আজকে একটু আগে ছুটি পেয়েছে। ভেবেছিল তারাতারি বাসায় গিয়ে কয়েকটা কাজ সেরে নিবে। লিফট দিয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমে সাইকেলের লক খুলতে খুলতে দেখে, বাইরে যে বৃষ্টি তাতে সাইকেলে গেলে কাকভেজা হওয়া ছাড়া উপায় থাকবেনা। তাছাড়া গত দুইদিন ধরে একটু কাশিও আছে। ভাবল রিকশায় যাবে। সাইকেল জায়গামত রেখে গেট দিয়ে বাইরে বের হয়ে এসে একটা রিকশা দেখতে পেল। ডাক দিল “মামা যাবেন ?” ওদিক থেকে একই সময় শুনতে পেল আরেকজন বলছে “এই খালি, যাবেন?”

আরেহ, এই মেয়েটাকে তো আজকে সকালেই অফিসে দেখেছে সে। লিফটে একই সাথে উঠছিল। একটা হাই বলেছে শুধু। নতুন এসেছে বোধ হয়। জিজ্ঞেস করল
: আপনি কোথায় যাবেন?
: মালীবাগ।
: আপনার আপত্তি না থাকলে চলেন, একসাথে যাই।
: (অনেকক্ষন ধরে কোন রিকশা পাচ্ছিলনা, তাই খানিকটা চিন্তা করে) আপনার বাসা ওদিকেই নাকি?

সুপ্রিয় দর্শকমন্ডলী, আপনারা দেখছিলেন বর্ষার প্রথম দিন উপলক্ষে আমাদের বিশেষ প্যাকেজ নাটক – “টিপ টিপ বৃষ্টি”। নাটকের বাকি অংশ দেখবেন বিজ্ঞাপন বিরতির পর।

–x–

(দর্শকদের আকুল আবেদনের প্রেক্ষিতে পরিমার্জিত প্লট)
দিপল জানালা দিয়ে দেখল যে বৃষ্টি অনেক বেশি। আজকে এমডি স্যারের সাথে একটা জরুরী মিটীং হওয়ার কথা। তাই সবাই নেমে গেলেও সে বসে আছে। হঠাত করে এমডি স্যারের পিএ এসে জানাল “আজকে মিটিং হবে না, আপনারা বাসায় যেতে পারেন। আর বাইরে তো বৃষ্টি, এমডি স্যার আপনাদের জন্য একটা মাইক্রো ব্যবস্থা করতে বলেছেন। সেটা নিচে আছে, আপনাদেরকে বাসায় পৌছিয়ে দিবে”। খুশিতে কম্পিউটার বন্ধ করে ওরা নিচে নামল, অফিসের গাড়িতে করে বাসায় যাবে বলে। একজন কলিগ আগে চলে যাওয়াতে মাইক্রোতে একটা সীট ফাকা আছে।

অফিস থেকে বের হওয়ার সময় দিপল গাড়ির ভিতর থেকে দেখল যে, আজকে ওর সার্ভার টীমে যে নতুন মেয়েটা জয়েন করছে সে দাঁড়িয়ে আছে। ভাবল আরে ওর বাসা তো মালীবাগ, সকালে বলছিল। মাইক্রোর রুটেই পরছে। মেয়েটা বৃষ্টির মধ্যে কষ্ট করে দাঁড়িয়ে আছে, ডাক দেই। সবাই একসাথে যাওয়া যাবে। দীপল বলল –

: এই সায়মা, বাসায় যাচ্ছ ?
: জ্বী ভাইয়া।
: গাড়িতে এসো, আমরা তো অই রুটেই যাব, তুমি রেলগেটে নেমে যেও।
: অনেক থ্যাঙ্কস দিপল ভাইয়া। একটু দাড়ান। আচ্ছা ভাইয়া, আপনি তাহলে রিকশা নিয়েই যান।

–x–

(টিপ টিপ বৃষ্টি – পর্ব তিন)
সাদিয়া ল্যাব ক্লাশে। সবার এক্সপেরিমেন্ট মিলে গেছে, কিন্তু স্যারের যেন কি একটা পছন্দ হয়নি, কতক্ষন ধরে সবাইকে লেকচার দিচ্ছে। ক্লাশের বাকিদের মেজাজ ব্যপক খারাপ। ক্লাশ শেষ করে দিলেই তো হয়, এক্সটেন্ড করার আর টাইম পাইলনা! সাদিয়া’র অবশ্য খারাপ লাগছে না। আজকের ল্যাবের টীচারটা বেশ হ্যান্ডসাম। কয়েকবার চোখাচোখিও হয়েছে। ও অবশ্য এমন ভাব করেছে যেন স্যারের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে।

বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ভালই রোদ ছিল বলে সাইকেলটা সাথে করেই বুয়েটে এসেছিল। আজ সায়মা’র প্রথম অফিস। বিকালে একসাথে আড্ডা দেওয়ার কথা আছে। সাদিয়া ল্যাব শেষে সায়মা’র অফিসের দিকে রওয়ানা দিল। পথিমধ্যে ঝুম বৃষ্টি। কি আর করা, থেমে গেলে আবার সায়মা চলে যাবে। ভাগ্যিস ব্যাকপ্যাকে একটা রেইনকোট ছিল। সেটা গায়ে জড়িয়ে আবার সাইকেলে প্যাডেল চালালো।

আইপিভিশন কোম্পানিটা হয়েছে বেশীদিন হয়নি। কয়েক বছর মাত্র, এর মধ্যেই বেশ লোকজন রিক্রুট করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ফ্লেক্সিবল অফিস আওয়ার, অফিস প্রেমাইজেই খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা, থাকার জন্য ডর্মিটরি – ভালই সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। গতদিন হ্যাংআউটে সায়মাই বলছিল এগুলো। সাদিয়া নিজেও অবশ্য চলে যাবে কিছুদিন পরে বিদেশে। ভাল একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরিটা কনফার্ম হয়ে গেছে। পরীক্ষা শেষ হতে আর কিছুদিন বাকি। বিদেশে চলে গেলে সায়মার সাথে এভাবে প্রতিদিন বিকালে সামনা সামনি বসে আড্ডা দিতে পারবেনা। সাইকেল চালাতে চালাতে এগুলো মাথায় ঘুরছিল। মনটা একটু নষ্টালজিক হয়ে গেল। ততক্ষনে অফিসের প্রায় সামনে চলে এসেছে।

–x–

বৃষ্টি কমে গেছে। ইব্রাহীম চিন্তা করল খামোখা সাইকেলটা অফিসে রেখে যাবে, তারচে ওটাতে করেই বাসায় যাওয়া যাক। এই ভেবে সে যখনই সাইকেল নিয়ে গেট দিয়ে বের হতে যাবে, আচমকা আরেকটা সাইকেল এসে গায়ের উপর পড়ল। ঘটনার আকস্মিকতায় ইব্রাহীম এবং সাদিয়া দুজনেই অবাক।
: সর‍্যি ভাইয়া, একেবারেই খেয়াল করিনি।
: তুমি নিজে ঠিক আছ তো ?
: আমার তেমন কিছু হয়নি। আপনার তো দেখি সামনের চাকা ভেঙ্গে গেছে।
: হুমম। সমস্যা নেই।
: তুমি কই যাচ্ছিলা ?
: কোথাও না। সায়মা’র সাথে দেখা করব।
: সায়মা কে ?
: আমার বান্ধবী, আজকেই জয়েন করছে আপনাদের অফিসে।
: ওহ, বুঝতে পারছি। ও তো কিছুক্ষণ আগে বাসায় চলে গেল বোধ হয়।
: কি বলেন! আমাকে বলল এখানে আসতে, এখন ভুলে গেছে!
: আচ্ছা, তুমি ফোন দিয়ে দেখ। আমি বাসায় যাই।
: আপনার বাসা কোথায় ?
: মালিবাগের চৌধুরী পাড়া।
: ওয়াও, সায়মা’র বাসাও ওইদিকে। চলেন, একসাথে যাই।
: আচ্ছা। তুমি সাইকেলে করে চলে যাও। আমার তো হেঁটে হেঁটে যাওয়া লাগবে।
: আরেহ, টেনশন নিয়েন না, এক জায়গায়ই তো যাব। হাতিরঝিল দিয়ে হেটেই চলেন।

বৃষ্টি থেমে গেছে। ওরা দুজন সাইকেল ঠেলতে ঠেলতে রওয়ানা দিল। নিকেতনের গেট পার হয়ে, হাতিরঝিলের পাশ দিয়ে বেশ সুন্দর রাস্তা। বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তার পাশের সবুজ ঘাসগুলো যেন আরও বেশি সবুজ হয়ে গেছে। ইব্রাহিমের এই জায়গাটা বেশ পছন্দের। অফিস শেষ করে বিকালে এখান দিয়ে যেতে ভালই লাগে।

সাদিয়ারও যে এই ধরনের পরিবেশ ভাল লাগে না তা না। সাইকেল ভেঙ্গে দিয়েছে দেখে একটু মন খারাপ আর কি। তবে, কিছুক্ষন বাদে হাটতে হাটতে রামপুরার দিকের আকাশে হালকা করে যে রংধনুটা উকি দিচ্ছে, সেটার দিকে তাকিয়ে মনটা ভাল হয়ে যেতে সময় লাগল না।
(অসমাপ্ত)


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Theme by Ali Han | Copyright 2025 Md Imran Hasan Hira | Powered by WordPress