"We human being, always find a solution, maybe not today, but if you really want to solve a problem, there’s always a way" – Ma Yun @ Stanford, 2013
Monthly Archives: September 2015

বাগানবিলাস

by Md Imran Hasan Hira

জুবিলী স্কুলের এইটের ক্লাস। একটু পরেই অঙ্ক ক্লাস শুরু হবে। স্যার আসলে পরে ক্লাসে টু শব্দ পর্যন্ত করা যাবেনা। স্যারের নামটাও সেরকম, শীতল কানাই। নাম শীতল হলে কি হবে, হাতে যে বেত থাকে, সেটার বাড়িতে পিঠ পুড়ে যেতে সময় লাগে না। আর যেদিন বেত থাকেনা, সেদিন অবশ্য অন্যরকম শাস্তি। তেমন কিছু না, খালি কান ধরে স্কুলের গেটে ছুটির সময় দাড়িয়ে থাকতে হবে। দুনিয়ার আর কোথাও এইরকম অপমানের শাস্তি আছে কিনা কে জানে। ক্লাস এইট বলে কি মান সম্মান নাই! ফাইভ সিক্সের পোলাপানরা যাইতে যাইতে দেখবে যে কান ধরে দাড়িয়ে আছে, কি লজ্জা!

স্যার ক্লাসে ঢুকেই দেখল পিছনের বেঞ্চে শয়তান দুইটা লাফাইতেছে। নরমাল টাইম হইলে সোজা পিছনে গিয়ে বেত দিয়ে মাইর দেওয়া শুরু করত। আজকে মতি-গতি সুবিধার না। সামনের বেঞ্চে মাঝ বরাবর কবির আর রায়হান বসছিল। কষায়া থাপ্পড় দিল দুইটারে – “তোরা ক্লাসে থাকতে ক্লাসের এমন অবস্থা কেন!” ক্লাসের ফার্স্ট আর সেকেন্ড ক্যাপ্টেনকে থাপ্পড় খেতে দেখে পুরা ক্লাস তব্দা মেরে গেল।

ছুটির ঘণ্টা বাজছে। স্কুলের সবাই হুড়মুড় করে গেট দিয়ে বের হচ্ছে. আর বের হওয়ার সময় গেঁটের পাশে সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের দেখে একটু করে থামতেছে। ওমা, কয়েকজনের কাঁধে দেখি ব্যাজও আছে। এইটা শীউর কানাই স্যারের কাজ, উনার হাত থেকে ক্যাপ্টেনদেরও রেহাই নাই।
: কিরে এত নড়োস কেন ?
: এইখানে মশা আছে, তোরে কামড়াইতেছে না?
: ধুর ব্যাটা, কিসের মশা! এখান থেকে যাইতে পারলে বাঁচি। আগেই কইছিলাম যে স্যাররে ডাকি, তুই ই তো আটকাইয়া দিলি।
: আমিতো মনে করছি যে থাইমা যাইব, এমনে যে হুট কইরা স্যার আইয়া পড়ব কে জানত।
: স্যার কিন্তু ওই রুম থেইকা তাকাইয়া আছে। বেশি নড়িস না, নাইলে গার্লস স্কুল ছুটি হওয়া পর্যন্ত দাঁড়াইয়া থাকন লাগব।

পায়রা নদীর পাশেই স্কুল। স্কুলের গেট দিয়ে বের হয়ে পুর্ব দিকের যে রাস্তাটা আছে ওটা ধরে কিছুদূর গিয়ে একটা ব্রিজ পার হলেই জুবিলী রোড। রায়হানদের বাড়ি ওই জায়গার কাছেই। আর কবিরদের বাসা একটু দুরে। জুবিলী রোড ধরে বেশ কিছুদুর গেলে কবরস্থান। কবরস্থানের পাশে সমতা সড়ক দিয়ে সোজা ভিতরে যাওয়ার পরে একটু ডানে মোড় নিলেই একটা পুকুর দেখা যায়, ওটার পাশেই কবিরদের বাসা। আসলে মেইন রাস্তা দিয়ে ঢুকে সোজা গেলেই কয়েকটা বাড়ি পরে।

স্কুল ছুটির পরে প্রতিদিন দুই বন্ধু জুবিলী রোড ধরে হাটতে হাটতে বাসায় যায়। যদিও আজকে মেজাজ খারাপ। তাই যাওয়ার পথে নদীর পারে ঘাসের মধ্যে দুইজনে বসে পড়ল। পাশে ইটের স্তুপ ছিল, রায়হান একটা খোয়া নিয়ে জোরে দুরে মারল, টুউউউউপ করে একটা আওয়াজ হল।
: এইটা কোন কাজ করল স্যার! শয়তানি করল ওরা, আর মাইর খাইলাম আমরা।
: স্যারের মাথা ঠিক নাই, আজকে নিউ টেনের ক্লাসেও নাকি তিনজনেরে ধরছে।
: আরে দাড়া করায়া রাখছে সেইটা তো সমস্যা না। স্কুল থেকে যাওয়ার পথে রুবি (রায়হানের ছোটবোন) দেখছে। এখন বাসায় গিয়া আম্মাকে বইলা না দিলেই হয়।
: টেনশন লইস না। ছুটির সময় এত পোলাপানের ভিড়ে দেখবি তোরে খেয়ালই করেনাই। ল যাই, এমনেই দেরী হইয়া গেছে।

বিকালের আলো পড়ে এসেছে। কবির হাটতে হাটতে মেইন রোড থেকে সমতা সড়কের গলিতে ঢুকল। মুদির দোকানের কাছাকাছি আসতেই দেখল জাকির সাহেব বেরুচ্ছেন বাসা থেকে । পাঞ্জাবী পরা, হাতে জায়নামাজ, মাগরিবের জন্য মসজিদে যাবেন মনে হচ্ছে। কবির সালাম দিল, আসসালামু আলাইকুম চাচা। কিন্তু জাকির সাহেব শুনেনাই বোধ হয়। কবির ভাবল, ধুর, সালাম দিলাম, শুনলই না। এমনেই অঙ্ক ক্লাসের পর থেকে মন খারাপ। হাটতে হাটতে কিছুদূর গিয়ে মুদির দোকান পার হয়ে ডানে মোড় নিল। এইখানেই বাড়িটা। কনট্রাক্টরের বিল্ডিং বলে এলাকার লোকজন।

বাড়ির সামনে দিয়ে প্রায় চলেই যাচ্ছিল, হঠাত করে দু পা পিছনে এসে দোতলার জানালার দিকে তাকাল। বেণু, খুব মনোযোগ দিয়ে কি যেন পড়ছে। জানালাটা অর্ধেক খোলা। গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিনই যাওয়ার সময় কবিরকে এইখানে থামতে হচ্ছে। থামতে হয় বললে ভুল হবে, আসলে দূর থেকে জানালাটার দিকে তাকালে অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করে। কিন্তু মানুষজন কি বলে আবার, এইখানে বেশিক্ষণ দাঁড়ানো যাবেনা। কবির বাসার দিকে হাঁটা দিল, আর ভাবতে লাগল প্রতিদিন এই সময় জানালায় কি করে মেয়েটা!

কনট্রাক্টরের বাড়িটাতে কেমন জানি একটা মায়া আছে। মেইন গেটের ছাউনির পাশ দিয়ে একটা কাগজী-ফুলের ঝোপ উঠেছে। যেটার একটা ডাল দোতলায় জানালা পর্যন্ত চলে গেছে। এর ফুলগুলোও বেশ সুন্দর, গাঢ় গোলাপি রঙের। অবাক লাগে দেখতে। সারা বছরই থাকে। ভাল একটা নাম আছে এই ফুলের, বাগানবিলাস না কি যেন।


Theme by Ali Han | Copyright 2025 Md Imran Hasan Hira | Powered by WordPress