"We human being, always find a solution, maybe not today, but if you really want to solve a problem, there’s always a way" – Ma Yun @ Stanford, 2013
Monthly Archives: November 2017

জাহাজ ভাঙ্গা দ্বীপ

by Md Imran Hasan Hira

ফয়সাল প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে।

দ্বীপটাতে একটা স্বর্গীয় ভাব আছে। ছোট্ট এই জায়গাটার সৌন্দর্যের মায়ায় সবাই এমনভাবে আটকা পরে যায় যে একবার আসলে আর ফিরে যেতে ইচ্ছে করেনা। পুরো দ্বীপটাতে বাড়িঘর বলতে অবশ্য তেমন কিছু নাই, একটা পুরনো রাজপ্রাসাদ আছে।

রাজপ্রাসাদ থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে ফয়সাল বের হল। ওর পিছনে এক ঝাঁক সৈন্য ওকে তাড়া করছে। সৈন্যদের হাতে বল্লম, তরবারি আর সব ধারালো অস্ত্র। ওদের চোখেমুখে রং দিয়ে আকা। দেখতে এমনই হিংস্র যেন ফরসালকে ধরতে পারলে ওরা চিবিয়ে খাবে। আকাশ তখন মেঘে অন্ধকার হয়ে গেছে। ঝড়ো বাতাসে চারপাশের সুন্দর পরিবেশ তাণ্ডব মুর্তি ধারণ করছে।

ফয়সাল প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে। সদরগেট দিয়ে বের হয়ে ডানে যাবে নাকি বামে, সেটা বুঝছিল না। পরে ডান দিকেই ঘরে দৌড়াতে থাকল। দৌড়াতে দৌড়াতে ও দেখল সামনে একটা কারেন্টের খাম্বা আছে। খাম্বা থেকে রাস্তাটা আবার ডানে মোড় নিয়েছে। ডানে কি আছে, ও দেখতে পাচ্ছে না। ও শুধু দৌড়াচ্ছে। খাম্বার কাছাকাছি এসে দৌড়ের রেশ না থামাতে পারে ও আর একটু হলেই পড়ে যাচ্ছিল রাস্তা পার হয়ে। কোনমতে খাম্বা আঁকড়ে ধরে সামলে নিল। কিন্তু সাথে সাথে অবাক করা একটা ব্যাপার ঘটল। খাম্বা’র উপর কি যেন আঁকা।

তিনটা মাথার খুলি’র মত, সমান দূরত্বে। একটা ত্রিভুজের তিন কোনায়, তিনটা। অবাক করা ব্যাপার যেটা হল, এই খুলি গুলোর সাথে আঙ্গুল লাগালেই স্পার্ক হচ্ছে। আর ও খেয়াল করে দেখল, প্রতিটা স্পার্কের সাথে একটা একটা করে বজ্রপাতও হচ্ছে, এবং সেটা গিয়ে পরতেছে ওকে ধাওয়া করা সৈন্যগুলোর উপড়ে। ফয়সাল আর কিছু চিন্তা করতে পারলনা। চোখ বন্ধ করে, নিজের সমস্ত শক্তি নিয়ে তিনটা খুলিতে তর্জনী, মধ্যমা আর অনামিকা চেপে ধরল। গত কিছুক্ষণের দৌড়ানি’র হাঁপানি এখনও যায়নি। এত বজ্রপাতের মাঝেও, নিজের প্রতিটা হার্টবিট শুনতে পাচ্ছে সে। হঠাত করে কিছু একটা বাধ সাধল।

অকস্মাৎ দেয়াল পেরিয়ে কোত্থেকে উটকো সাইজের এক সৈন্য এসে ওর আঙ্গুলের উপর কুড়াল দিয়ে কোপাতে লাগল। প্রতিটা আঘাতে ফয়সাল ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠছিল। কিন্তু তারপরও সে আঙ্গুল গুলো কারেন্টের খাম্বায় খুলির উপর চেপে ধরল। আর হঠাত করে সে দেখল এই দিক বরাবর, একেবারে ওর মুখের সামনেই আর একটা খুলি আছে। ও বুঝতে পারছিল না কি করবে। কোনমতে নিজের ব্যাল্যান্স সামলে নিল। তারপর বাম হাত দিয়ে খুলিটাকে চেপে ধরে কিছুক্ষণ রাখতেই, বিশাল এক বজ্রপাত এসে কুঠারওয়ালা সেই সৈন্যের মাথার উপর পড়ল।

অবশেষে ফয়সাল এই সব সৈন্যদের হাত থেকে বাঁচল। খাম্বার যে পাশে ও ঝুলছিল, সেখান থেকে বের হয়ে গিয়ে খুঁজতে লাগল কিভাবে দ্বীপ থেকে পালাবে। এই দ্বীপে আর নাহ।

কিছুদূর হাঁটার পরে ও দেখল, পাশের একটা টিলাতে ঘাসের উপর একটা জ্যাকেট পড়ে আছে। দেখে মনে হল এটা ওরই জ্যাকেট। ওর কেন যেন Deja Vu রকমের একটা অনুভূতি হল। মনে হল, সকাল বেলা ও এখানেই ছিল। কারও একজন এর সাথে সুর্যোদয় দেখতে বের হয়েছিল। দুজন মিলে হাঁটতে হাঁটতে দ্বীপের এদিকটায় আসছিল। তারপর একটা জাদুঘরে ঢুকছিল। জাদুঘরে পুরানো রাজ-রাজাদের অনেক কিছুই সাজানো ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেরকম কোন জাদুঘর এই দ্বীপে নেই। কিংবা এই দ্বীপে ওরা কিভাবে/কখন আসছে সেসব কিছুই মনে করতে পারল না।

জ্যাকেটটা নিয়ে হাতে পেঁচিয়ে নিল। তারপর সামনে হাঁটতে লাগল। দেখল কয়েকটা প্লাটফর্মে সারি সারি করে ছোট ছোট নৌকা বাধা। আরও কিছুদুর এগিয়ে গিয়ে দেখল একটা উষ্কখুষ্ক টাইপের লোক চেচাচ্ছে, “দ্বীপের জাহাজ ওইদিকে, দ্বীপের জাহাজ ওইদিকে”। আশেপাশে আর কোন লোক নাই, তারপরও এই লোক চেঁচাচ্ছে কেন, সেটা চিন্তা করতে করতে ফয়সাল জাহাজের দিকে হাঁটা দিল। জাহাজ কি খুঁজে পাবে ফয়সাল?


Theme by Ali Han | Copyright 2025 Md Imran Hasan Hira | Powered by WordPress