"We human being, always find a solution, maybe not today, but if you really want to solve a problem, there’s always a way" – Ma Yun @ Stanford, 2013
Monthly Archives: August 2018

সাইকাসের ফুল

by Md Imran Hasan Hira

রুমটার ভিতরে একগাদা বই। থরে থরে সাজানো বই। সেই পুরনো আমলের বই থেকে শুরু করে চকচকে হ্যারি পটার কোনটাই বাদ নেই। জানালা দুটো দিয়ে ভালই আলো আসছে। সকালের কমলা আলো। দেখে মনে হচ্ছে ফটো এডিটরের Warmth ফিল্টার আপ্লাই করে রাখছে। একদিকের দেয়ালে একটা ব্লাকবোর্ডও আছে।

সবাই মিলে হুরমুড় করে ঘরে ঢুকল। সারাদিন এর দৌড়ঝাঁপ এর পরে ফ্রেশ হয়ে এখন একটু রেস্ট নিতে হবে। ওমা, রুমের ভিতর থেকে স্যার বের হয়ে বলল – সবাই রেডি হও, এখন পরীক্ষা! কি আজব, এই স্টাডি ট্যুরে এসেও পরীক্ষা দিতে হবে!

পরীক্ষা দিতে হলে তো চেয়ার টেবিল লাগবে, সেগুলো কই পাব? স্যার বলল, বইগুলো একসাথে করে টেবিল এর মত বানায়ে নিতে। বাইরে করিডোরে এক্সট্রা চেয়ার আছে, সেগুলো ভিতরে নিয়ে আসলে সবার বসার জায়গা হয়ে যাবে। বই দিয়ে টেবিল বানাতে গিয়ে বাধল ঝামেলা। প্রথমে বইগুলোকে একসাথে করে ছোট ছোট স্তূপ করা হল, তারপর Lego সেটের মত করে একটা টেবিল এর কাছাকাছি কিছু একটা বানানো হল। যতটুকু হয়েছে, তাতে দুইপাশে দুইজন বসে লিখতে পারবে।

পরীক্ষা শুরু হল। এত কাছ ঘেষে সবাই বসা, চাইলেই অন্যের খাতার সব দেখা যায়। কবির কি লিখবে বুঝতেছে না। স্যারের মাথায় গণ্ডগোল আছে, ট্যুরের মাঝখানে বসে আর কোন কাজ পায়নাই! যাই হোক, কবির একটু উকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করল বেণু কি লিখতেছে। মেয়েটা লিখেই যাচ্ছে, এত কি লিখতেছে! সব কমন পরছে মনে হয়। বলেই বসল – “এই বেণু, কি লিখিস এত!” এই কথা শুনে, স্যার কটমট চোখে ঘুরে তাকাল কবিরের দিকে, আর দিল এক ঝাড়ি। স্যারের ঝাড়ি খেয়ে ঘুম থেকে তড়াক করে উঠল কবির।

এত সকাল সকাল ঘুম ভাঙ্গার কারনে মেজাজ ব্যাপক খারাপ। তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙ্গে যাবার আর একটা কারণ আছে। আজকে কি যেন একটা গুরুত্বপুর্ন কাজের জন্য তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েছিল সে। ওহ, মনে পরছে, বেণু দেখা করতে বলেছে। এই ভ্যালেন্টাইন হারামজাদা’র ছুতা দিয়ে মানুষজন এখনকার সময় বাইরে হুশপাশ করার একটা ফন্দি বের করছে। অবশ্য বেণুর সাথে হুশপাশ করতে কবিরের খারাপ লাগেনা। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল দেরি হয়ে যাচ্ছে। এখনই না বের হলে সংসদ ভবন যেতে যেতে সময় পার হয়ে যাবে। আর তখন অন্য সমস্যা আছে। বেণুর রাগের ইমপ্যাক্ট ভ্যালেন্টাইনের উপর রাগের থেকে অনেক বেশী। বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখল গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। ভেজা পিচঢালা রাস্তার পাশের ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে থাকল। কবিরের বাসা থেকে সংসদ ভবন ঘণ্টাখানেকের হাটার রাস্তা।

সংসদ ভবন আসতে আসতে বৃষ্টি থেমে গেছে। কিন্তু কিছু একটা ঝামেলা আছে। ফাল্গুনের শুরুতে সাধারণত এইরকম বৃষ্টি হয় না। কবিরের মনে হল সংসদ ভবন জায়গাটাও অন্যান্য সময়ের থেকে একটু অন্যরকম লাগতেছে। সবসময় এই জায়গায় সে ময়লা আবর্জনা দেখে আসছে। আর আজকে কিনা সব পরিষ্কার দেখাচ্ছে! সংসদ ভবনের দক্ষিণের পাশের রাস্তায় সাড়ি সাড়ি সাইকাস গাছ। অগুলার পাশ দিয়েই হাঁটছিল। খেয়াল করে দেখল, রাস্তার আইল্যান্ডের মাঝে কৃষ্ণচূড়াগুলোও কেবল ফুটতে শুরু করেছে। কিছুদূর হেটে গিয়ে দেখল একদল লোক ব্যায়াম করতেছে। সামনে একটু নিচু জায়গা দেখে, লাফ দিয়ে পার হতে যাবে, কিন্তু কি মনে করে পিছনে তাকাল। দেখল আড়ং এর মোড় এর দিক থেকে বেণু আসছে।

মেয়েটাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। শাড়ি পড়ে এসেছে। একটা নাটকীয় ভঙ্গিতে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরবে কিনা চিন্তা করছিল। চিন্তা করতে করতে ততক্ষণে বেণু কাছাকাছি চলে এসেছে। কবিরকে দেখে বেণু একটা আলতো হাসি দিল। আর ভোরের আভায় সেই হাসির ঝিলিকে কবির ভাবল এই রকম একটা মানুষ সে কিভাবে খুজে পেল! কাছে আসতেই কবির ওকে আলগা করে তুলে নিল। বাহ, এত অনেক হালকা। বেণু চেঁচিয়ে উঠল – “ছাড়! শাড়ির ভাজ নষ্ট হয়ে যাবে, অফিস যাচ্ছি তো”। এত উচ্ছল একটা মেয়ের সাথে ওর জীবন পার হবে, সেটা মনে হয়না ও কখনও ভেবেছিল।

হাঁটতে হাঁটতে সাইকাসের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল আর কি যেন একটা গানের সুর গুনগুন করছিল বেণু। খুবই পরিচিত গান, কিন্তু কবির ধরতে পারতেছেনা। কবির ভাবতেছিল এই মুহূর্তে সে সাইকাসগুলোর থেকেও সুখী মানুষ। গাছ থেকে ফলগুলো যখন মাটিতে পরছিল, কবির প্রত্যেকটা শব্দ টের পাচ্ছিল। হঠাত করে গাছে জমে থাকা বৃষ্টির পানি ওদের মাথার উপর পড়ল। পানির ফোটাগুলো বেণুর নাকের উপর ভিড় করে স্বচ্ছতার জানান দিচ্ছিল। কবিরের মনে হল, সবকিছু স্লো মোশনে চলছে। বেণুর সাথে হাঁটতে গেলে এটা ওর প্রায়ই মনে হয়, সময়টা যদি থমকে যেত। বছরের বছরের পর ধরে যদি ওরা এভাবে একসাথে হেঁটে যেতে পারত। এমন সময়ই ছোটবোন তারানা ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে উঠাল – “এই ভাইয়া, এই ভরদুপুরে এত জোড়ে গান চালিয়ে ঘুমাচ্ছ কেন!” কবির চোখ কচলাতে কচলাতে কিছুক্ষণের জন্য হা করে তাকিয়ে থাকল। হেডফোনে তখনও ফুল ভলিউমে বাজতেছে –

আজ যখনই ডাকি
জানি তুমি দিবে সাড়া
এই জীবন ছিল
নদীর মতো গতিহারা দিশাহারা
ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে
আমি হয়ে গেছি তারা


Theme by Ali Han | Copyright 2025 Md Imran Hasan Hira | Powered by WordPress