"We human being, always find a solution, maybe not today, but if you really want to solve a problem, there’s always a way" – Ma Yun @ Stanford, 2013
Monthly Archives: March 2020

আচরণগত স্বয়ংক্রিয় অংশগ্রহণ

by Md Imran Hasan Hira

– ভাই কষ্ট করে একটু লোকেশনটা অন রাখেন
– লোকেশন দিয়ে কি হবে, আমরা চৌধুরী পরিবারের লোক, আমাদের করোনা ধরেনা

সমস্যাঃ কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে, তার সংস্পর্শে যারা যারা এসেছে, তাদের খুঁজে বের করা এবং দরকার হলে কোয়ারান্টাইন করা।

প্রযুক্তি ও আচরনগত দিক থেকে সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনাঃ

এখানে আসলে দুইটা সমস্যা –
A. ইউজারের লোকেশন ট্রাক করার প্রযুক্তি
B. মানুষজন যাতে লোকেশন ট্রাক করা বন্ধ করে না রাখে, এটা নিশ্চিত করা

#A সমাধান করা খুবই সহজ, ব্লুটুথ + জিপিএস + মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরের টাওয়ার। যদিও গ্রামেগঞ্জে সবার স্মার্টফোন নাই, বা শহরে সবাই ইন্টারনেট অন করে রাখেনা, তারপরও একটা মোবাইল আপ্লিকেশন বানিয়ে এটা কাভার করা যেতে পারে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, #B যদি না থাকে তাহলে সামগ্রিক চেষ্টাটাই বৃথা যাবে।

#B হচ্ছে পুরাই বিহ্যাভিওরাল + কালচারাল ব্যাপার। এবং এটা সমাধান করা মনে হচ্ছে চ্যালেঞ্জিং। কারন, একটা মানুষ করোনা ভাইরাস ব্যাপারটার ভয়াবহতা সব থেকে বেশী বুঝতে পারবে যখন সে নিজে/তার পরিবারের কেউ আক্রান্ত হবে। এখন আক্রান্ত হবার আগে তাকে যতই বুঝাই, “ভাই কষ্ট করে একটু লোকেশনটা অন রাখেন” , সে বলবে “আমরা চৌধুরী পরিবারের লোক, আমাদের করোনা ধরেনা”

এটাই প্রব্লেম। কেউ আক্রান্ত হবার দু সপ্তাহ আগের লোকেশন ডাটা লাগবে। তার মানে একটা মানুষ করোনাতে আক্রান্ত না হলেও, তাকে কি ধরনের Reward Mechanism এ ফেললে সে নিজে থেকে এই ব্যাপারটা বুঝতে পারবে?

মানুষজন যাতে লোকেশন ট্রাক করা বন্ধ করে না রাখে, এটা নিশ্চিত করতে হলে কয়েক ধরনের সমাধান হতে পারে –

১। সকল মোবাইল অপারেটর টাওয়ার এর ডাটা ব্যবহার করে কে কোথায় কখন অবস্থান করছে সেটা খুঁজে বের করা এবং আক্রান্ত রোগীর সাথে ক্রস ম্যাচিং করা। ম্যাস লেভেলে, সরকারী পর্যায়ে সহযোগিতা পেলে এটা সম্ভব। দুর্যোগকালীন সময়ের কথা চিন্তা করে এই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

২। মানুষ যাতে নিজে থেকেই লোকেশন শেয়ার দেয়, সেজন্য সচেতনতা তৈরী করা। মানুষজনকে বুঝাতে হবে যে আপ্লিকেশন এর এই ফিচারগুলো চালু করে রাখাটা তার জন্য জরুরী। এই বুঝানোর জন্য আবার কয়েকটা ফ্যাক্টর ইউজ করা যেতে পারে –
২.১ সিচুয়েশনের ভয়াবহতা পাব্লিসাইজ করা (Fear Factor)
২.২ সবাই সোশ্যাল নেটওয়ার্কে এটা নিয়ে বলতেছে (Gaming Factor)
২.৩ অলরেডি যারা আক্রান্ত, অন্তত তাদের লোকেশন ট্রাজেক্টরির ভিজুয়ালাইজেশন ম্যাপ( Realisation Factor)

৩। ….

এইরকম আর কি কি উপায় হতে পারে ?


রেজওয়ান সাহেব আর জাদুর বাক্স

by Md Imran Hasan Hira

(এড়িয়ে যাবেন না, আর যারা এই মেসেজটি পাঁচজনকে ইনবক্সে না পাঠাবে, তারা আগামী দিনে সব টাকা পয়সায় লস খাবে :p )

গত সপ্তাহে রেজওয়ান সাহেব হাটতে হাটতে একটা বাক্সে উষ্টা খেলেন। বাক্সটা দেখে মনে হইল জাদুর বাক্স টাইপ। তুলে বাসায় নিয়ে আসলেন, পরিস্কার করে ওটাতে একশ টাকার একটা কচকচে নোট রেখে দিলেন। পরের দিন বাক্স খুলে দেখেন একশ টাকার দুইটা নোট। তাজ্জব বেপার।

বাক্সর মধ্যে টাকা রাখলে পরের দিন সেটা দুইগুন হয়ে যায়। বাহ, মজা তো।

তারপর একশ টাকার নোট দুইটা আবার বাক্সর মধ্যে রেখে দিল। তিন নাম্বার দিন দেখে সেখানে পাঁচশ টাকার নোট। মানে ডাবলের থেকেও বেশী। কেমনে কি! বউরে জিজ্ঞেস করলেন, বউতো অবাক! চাইর নাম্বার দিন এক হাজার টাকার নোট হয়ে গেল। লোকটা হিসাব কনফার্ম করার জন্য, ছেলের মাষ্টারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন এইভাবে টাকা বাড়তে থাকলে কতদিনে কত টাকা হবে। হিসাব করে দেখা গেল, বেশীদিন না, বিশ পঁচিশ দিনেই লাখপতি হয়ে যাওয়া যাবে।

এই খুশীতে রেজওয়ান সাহেব কাওরান বাজারে মাছের আরতে গেলেন, আজকে বড়সর একটা রুই মাছ কিনে বাসার সবাই মিলে খাবেন। মাছের বাজারে ঘুরতে ঘুরতে একটা রুই মাছ পছন্দ হইল। সাত কেজি ওজনের রুই মাছ। জীবনে এত বড় রুই মাছ কখনও কিনেন নাই। মাছ কিনে দোকানদারকে কাটতে দিলেন। এর মধ্যে পাশ থেকে এক লোক বড় করে দিল এক হাঁচি রেজওয়ান সাহেবের একেবারে মুখের উপর। রেজওয়ান সাহেব লোকটা ভাল মানুষ। যদিও চারদিকে করোনার ছড়াছড়ি। উনি অবশ্য এগুলাতে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছেন না। আল্লাহ চায় তো মারবেন, আল্লাহ চায় তো বাঁচাবেন। যাই হোক, বাজারের হাঁচি কাশীর যন্ত্রণায় তাড়াতাড়ি রুই মাছ নিয়ে বাসায় আসলেন।

ওইদিনের পর থেকে রেজওয়ান সাহেবের একটু জ্বর জ্বর ভাব। হাল্কা কাশিও আছে। টিভিতে বলতেছে এই সমস্ত লক্ষণ থাকলে বাড়ীর বাইরে না বেরে হতে। কিন্তু আজকে আবার শুক্রবার, জুম্মার নামাজ কি বাসায় বসে পড়া যায়! জ্বর শরীর নিয়েই কোন মতে গোসল করে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন। দুইদিন পর রেজওয়ান সাহেবের অবস্থা বেগতিক দেখে পরিবারের লোকজন উনাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। ডাক্তাররা টেস্ট করার পর বলল যে রেজওয়ান সাহেব করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। আয়হায়, এখন কি হবে! এই ভাইরাসের তো এখন পর্যন্ত কোন ভ্যাক্সিন নাই। এইদিকে বাক্সের মধ্যে টাকা কিন্তু বাড়তেছে। রেজওয়ান সাহেবের স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে ডাক্তারকে বললেন “ডাক্তার সাহেব, যত টাকা লাগে নেন, তবুও একটা ভ্যাক্সিন দেন”। ডাক্তার সাহেব দেশের সেরা মেডিক্যাল কলেজ থেকে পড়াশুনা করা, অনেক বড় ডিগ্রীওয়ালা ডাক্তার। কিন্তু তারপরও উনাকে বলতে হইল, “দুক্ষিত, আমাদের কাছে এই রোগের কোন চিকিৎসা নাই। আপাতত আমরা ইমার্জেন্সিতে নিয়ে রাখছি, বাকিটা আল্লাহর হাতে”।

হাসপাতালে আরও পাঁচদিন করোনা ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত রেজওয়ান সাহেব বাঁচতে পারলেন না। ভাইরাসের আক্রমণে মারা গেলেন। এদিকে রেজওয়ান সাহেবের স্ত্রী, বাক্স খুলে দেখেন অনেক টাকা। এত টাকা দিয়ে কি হবে, যেখানে মানুষটাই নাই।

রেজওয়ান সাহেবকে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হল। মারা যাবার পর তার রুহ বেশ খুশী। সারা জীবন নামাজ কালাম পড়ে আসছেন। কখনও কারও ক্ষতি করেননাই। করোনার মত রোগ নিয়েও জীবনের শেষ জুম্মা মসজিদে পড়ে আসছেন। ঝামেলা বাধল হাশরের ময়দানে যখন হিসাবের খাতা খুলা হল।

ডান কাঁধের ফেরেশতা বলল – “এই লোক জীবনে অনেক পুণ্য করেছে।” একে একে সব পুণ্যকাজের বর্ননা দিল। তারপর যখন বাম কাঁধের ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করা হল, সে বাধা দিয়ে বলল – “এই লোক সারাজীবন ভাল কাজ করছে। শুধু শেষে এসে নিজের করোনা ভাইরাস দিয়ে শত শত লোককে আক্রান্ত করেছে” । রেজওয়ান সাহেব তখন বলল – “আমি তো জানতাম না” ।বাম কাঁধের ফেরেশতা তখন বলবে – “কি জানতা না, তোমার এলাকার ডাক্তার বলছিল তোমাকে করনার জ্বর কাশি নিয়ে মসজিদে না যাইতে, বল বলছিল কিনা!” । রেজওয়ান সাহেব উত্তর দিলেন – “তা বলছিল”। ফেরেশতা ধমক দিয়ে বলল – “তাহলে এত সতর্ক করার পরেও রোগ নিয়ে মানুষজনের মাঝে গেছ কেন?” রেজওয়ান সাহেব বললেন – “আমি তো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য গিয়েছি, আমাকে মাফ করে দেওয়া যায়না?” তখন উত্তর আসবে – “বারবার বলা সত্ত্বেও নিজের করোনা ভাইরাস বাকিদের ভিতরে ছড়িয়ে দিয়ে এতগুলো মানুষের মৃত্যু ঘটানোর শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।” শেষ পর্যন্ত রেজওয়ান সাহেব বেহেস্তে যেতে পেরেছিলেন কিনা, সেটা জানার সৌভাগ্য হয়নি। কারন তার আগেই ঘটনা বর্ননাকারী নিজেই করোনাতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চলে গিয়েছেন।

যারা এতদূর পড়ে আসছেন, তাদের জন্য

  • আগামী কয়েক সপ্তাহ যতটুকু সম্ভব মানুষজনের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। রোগশোক থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য এটাই দরকার এখন। প্যানিক হতে হবে এমন না, তবে নিজেকে সেফ রাখতে তো দোষের কিছু নাই।
  • ঘরের বাইরে গেলে যত কম পারা যায় বিভিন্ন জিনিস ছোঁয়া থেকে বিরত থাকুন।* বাইরে থেকে আসার পর সাবান/স্যানিটাইজার দিয়ে (মিনা কার্টূনের মত) ভাল করে হাত কনুই পর্যন্ত পরিষ্কার করুন।
  • আপনার জ্বর, কাশি থাকলে সেটা যাতে বাকিদের মাঝে ছড়াতে না পারে, তার জন্য আপনাকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু শুধু করোনা ভাইরাসের জন্য বেহেস্তে যাওয়ার সুযোগ হেলায় হারাবেন না।
  • যারা বলছে এগুলা কোন সমস্যা না, তাদেরকে বুঝান যে রোগ শোক থেকে দুরে থাকাটাও পবিত্রতার অংশ।

বাসন্তী-ফুল

by Md Imran Hasan Hira

: কিরে, নিচের দিকে তাকিয়ে কি দেখিস?
: শাড়ির কুচি লম্বা হয়ে গেছে মনে হচ্ছে, একটু দেখে দাও তো ঠিক আছে কিনা।
: ভাল করে দাড়া, দেখি। কই, ঠিকই তো আছে। এই শাড়ি কার কাছ থেকে নিছিস?
: আম্মুর শাড়ি।
: আচলটা সুন্দর, আন্টির পছন্দ আছে। চল ওইদিকে যাই, পোলাপান আছে।
: আর কিচ্ছুক্ষণ বসি আপু, প্লিইইজ
: এইখানে কি পাইছস?
: রোদ পড়তেছে, ভালই তো লাগতেছে।

#বসন্ত_বাতাসে
#না_হয়_একটু_দেরীই_হল


আজ আফসানা’র ফ্লাইট

by Md Imran Hasan Hira

গুরাহ রাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। খুব একটা বেশী বড় না। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স এর বিমান সাই সাই করে উড়িয়ে নিয়ে চলে আসছে। অনেকটা হানিফ এন্টারপ্রাইজ এর বাসের মত। জাভা সাগরের উপর দিয়ে আসার সময় অনেক গুড়ি গুড়ি নৌকা চোখে পরছে। বিমান নামার আগে পাইলট এর কথামত কোমড়ের দড়ি(!) শক্ত করে বেধে নিয়েছিল আফসানা। ল্যান্ড করার পর সেটা আলগা করে নিল। নামার আগে চেক করে নিল পাসপোর্ট সাথে আছে কিনা। এখন প্রথমেই যে কাজ করতে হবে, ডলার ভাঙ্গিয়ে রুপিয়াহ বানাতে হবে। এয়ারপোর্ট এর ভিতরে একটা মানি এক্সচেঞ্জ আছে। কিন্তু ওইটাতে যে পরিমান ভিড়, তাতে সারাদিন লাগবে মনে হচ্ছে। আস্তে আস্তে এক্সিট দিয়ে বের হয়ে বাইরে আর একটা এক্সচেঞ্জ খুঁজে বের করল। এখানকার কারেন্সির যা অবস্থা, মানি এক্সচেঞ্জ করে তো সে প্রায় কোটি টাকার মালিক হয়ে গেল।  

দেনপাসা শহরটা বেশ বড়ই। কি অদ্ভুত একটা নাম, শহরের নাম কেউ এমন দেয় ! দেনপাসা হচ্ছে বালির রাজধানী। ইন্দোনেশিয়ার ট্যুরিস্টিক এলাকাগুলোর মধ্যে বালি দ্বীপ একেবার টপের দিকে। জিওগ্রাফিকাল লোকেশন চিন্তা করলে এই দ্বীপের আবহাওয়া মোটামুটি মনসুন ক্লাইমেট এর মধ্যে পরে। সতের হাজার দীপের একটা দেশ, ম্যাপের উপরে ডানে বামে যেখানে তাকাই, সেখানেই খালি দ্বীপ। মনে হয় পানির মধ্যে থেকে এক গাদা ব্যাং মাথা উঁচু করে তাকিয়ে আছে। সম্ভবত বেশী বেশী ভূমিকম্প হবার কারনেই এমন হয়ে গেছে, কে জানে! 

আফসানা’র থাকার জায়গা হচ্ছে পুলম্যান রিসোর্ট। ন্যানোটেকনোলজির একটা কনফারেন্সে এসেছে ও। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে এইখানে ওদের কাজ একসেপ্ট হয়ে যাবে, ভাবতেই পারেনি। কনফারেন্স অথরিটি থেকে ও যখন কনফার্মেশন ইমেইল পেয়েছিল, কিছুক্ষণ হা করে ছিল। থিসিস সুপাভাইজরও বলল প্রেজেন্ট করে আস। এই কনফারেন্সটা প্রতিবার অনলাইনে করে। এবারই প্রথম ফিজিক্যাল ভেন্যুতে আরেঞ্জ করতেছে। সমুদ্র সৈকতের একেবারে পাশে। এয়ারপোর্ট থেকে একটা ট্যাক্সি নিয়ে রিসোর্টে চলে এসেছে সে।

তাড়াহুড়া করে কাজকর্ম গুছাতে গিয়ে ট্রিপের ব্যাপারে তেমন কোন প্লানই করতে পারেনি আফসানা। কনফারেন্স তিনদিনের। যেদিন শেষ, সেদিনই রিটার্ন করলে টিকেটেরে দাম বেশী দেখে দুইদিন পরের টিকেট নিয়েছে ও। ট্রাভেল এজেন্সি থেকে বলল দুইদিন এক্সট্রা থাকা লাগলেও, সব মিলিয়ে এটা ভাল ডিল। খারাপ হয়নাই, লাস্টের দিন এমনিতেও ওর প্রেজেন্টেশন নাই, সব মিলায়ে এক্সট্রা তিন দিন ফ্রি পাওয়া যাবে। হোটেলে পৌঁছে, ফ্রেশ হয়ে পেপারের কাজকর্মে বসে গেল। 

বিকালে হতে হতে খেয়াল করল পোস্টার প্রিন্ট করতে হবে। যতটুকু এডিট করেছে, সেটাই এখন প্রিন্ট না করালে আবার দোকান খোলা পাওয়া যাবে কিনা সেটাও একটা কথা। আশেপাশে প্রিন্ট করার জায়গা খুঁজতে গুগল ম্যাপে সার্চ দিল, কিছু দোকানের নাম দেখাচ্ছে। কোয়ালিটি কেমন হবে কে জানে। মোবাইলের ম্যাপে ও কিছুক্ষণ আশেপাসের জায়গা গুলো ব্রাউজ করে নিল, তাইলে নেট না থাকলেও ক্যাশ থেকে ম্যাপটা কাজ করবে। পেনড্রাইভে পোস্টারের ফাইলগুলা সেভ করে আফসানা বের হয়ে গেল হোটেল থেকে। 

প্রথম যে দোকানটা দেখেছিল ম্যাপে, সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর আর একটা দোকানে দেখল প্রিন্ট করা যায়। ওটাতে ঢুকল আফসানা। ঢুকতে ঢুকতে পাশ থেকে শুনল একজন বাংলায় ফোনে কথা বলতেছে, একপেশে কথা যদিও।  
– হ্যালো মামা, শুনতে পাচ্ছেন? মামা, আপনাদের বাসা নাম্বার যেন কত?
– আচ্ছা, আমি আর একবার বলি ঠিকানা, ঠিক আছে কিনা দেখেন তো।
– না মামা কিছু না, এমনেই জিজ্ঞেস করতেছি।
– জি আমি ভাল আছি, ইজতেহাদ আর ইরতিদা কেমন আছে?
– জ্বি মামা, এখন রাখি। দোয়া করবেন।

ফোনে কথা বলছিল যে, কিচ্ছুক্ষণ পর সে কাউণ্টারে এসে দুইটা পোষ্টকার্ড নিয়ে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করল যে এই দুটো বাংলাদেশে পাঠাতে কত খরচ পরবে। আফসানা একটু ওয়েট করল তার পোষ্টকার্ড পাঠানো শেষ পর্যন্ত, তারপর আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল – 
– আরেহ ভাই, আপনি বাংলাদেশী নাকি ?
– হ্যা, আপনি?
– বাংলা শুনে তো বুঝতেই পারছেন।
– হা হা, সেটা ঠিক।  
– ঘুরতে এসেছেন?
– হ্যা, আপনি?
– আমি একটা কনফারেন্সে আসছি। পোস্টার প্রিন্ট করাব, এইজন্য ভাল একটা দোকান খুজতেছি। 
– কিসের পোস্টার?
– কনফারেন্সের কাজকর্ম আর কি। 
– উড়ি বাবা! গবেষনা কাজকর্ম, সে তো অনেক কঠিন কাজ।
– কি বলেন, আমার কাছে তো এখন প্রিন্ট করানোটা আরও কঠিন কাজ মনে হচ্ছে। 
– হুম, পোস্টারের জন্য তো বড় প্রিন্টার লাগবে।
– হ্যা।
– দাঁড়ান দেখি। 
কিছুক্ষন গুগলে সার্চ দিয়ে দুইটা দোকানের সাজেশন দিল। তারপর আফসানাকে মোবাইলে দেখিয়ে দিল কিভাবে যেতে হবে।

কনফারেন্সের মেইন দুইদিন বেশ দৌড়াদৌড়ি গেছে। প্রতিদিনই হোটেলের রুমে আসতে আসতে অনেক দেরী। আর টায়ার্ড হয়ে কোনমতে ফ্রেশ হয়ে ঘুম। শেষদিন সবকিছু গুছিয়ে বিকালের আগে যা একটু সময় পাওয়া গেছে। আফসানা ভাবল বীচ থেকে ঘুরে আসবে। 

রীসোর্ট থেকে বেরিয়েই সমুদ্র সৈকত। হাটতে হাটতে লেগিয়ান বীচের ধারে এসে পড়ছে। আকাশটা বেশ পরিষ্কার থাকায় সমুদ্রের পানি নীল হয়ে গেছে। 
– আরেহ আপনি এখানে ?
– হ্যা, আমি কাছেই থাকি। 
– থাকেন মানে?
– থাকি মানে, এখানে একটা airbnb নিয়ে থাকি। 
– আপনি না ঘুরতে এসেছেন? 
– হ্যা, ঘুরতে আসছি। ঘুরতে আসলে কি থাকা যাবেনা?
– না না, তা না। কতদিন ধরে আছেন এখানে? 
– সপ্তাহখানেক হল এসেছি। মাসখানেক থাকব।
– এতদিন ধরে থাকবেন?
– আমি আসলে এখান থেকে কাজ করি। আমার জবটা রিমোট জব। এই জন্য একটু সুবিধা। 
– আচ্ছা। আপনি তো বেশ আরামে আছেন। জব করার উছিলায় ঘুরাঘুরি করতেছেন। 
– সব সময় তো ঘুরাঘুরি হয়না। আজকে কাজ করতে করতে একটা জিনিস মিলতেছিলনা, এই জন্য মাথা খালি করতে হাঁটতে বের হইছি। আপনার প্লান কি? 
– তেমন স্পেসিফিক কোন প্লান নাই। এখানে কিছুক্ষণ থাকব। তারপর উলুয়াতু মন্দিরের দিকে যাব। আপনি গেছেন নাকি?
– হ্যা, গিয়েছিলাম গত সপ্তাহে। জায়গাটা সুন্দর অনেক। 
– আমিও শুনেছি এটা নিয়ে, দেখি কেমন লাগে। 
– আপনার কনফারেন্স কেমন হল? 
– ভালই হয়েছে। 
– কিছু মনে করবেন না, আপনি কোন ভার্সিটিতে পড়াশুনা করতেছেন? 
– বুয়েট থেকে। 
– হা হা 
– হাসতেছেন কেন?
– আপনি কোন ব্যাচ?
– আমরা কেবল পাস করে বের হয়েছি। 
– আচ্ছা, আমি ‘০৭ ব্যচ। 
– আরেহ তাই নাকি ভাইয়া। 
– (মনে মনে) ধুর এভাবে ভাইয়া বলে ফেলল ! (অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখে) বাহ, এখন কি মাস্টার্স করতেছ? তুমি করে বললাম। কিছু মনে করনাই তো! 
– আরেহ না না, সমস্যা নাই, আমরা তো ছোটই। হ্যা, মাস্টার্সের লাস্ট সেমিস্টার চলতেছে। কিভাবে কিভাবে যেন পেপারটা আক্সেপ্টেড হয়ে গেল। তাই এখানে আসছি। 
– কিসের উপর পেপার ছিল?
– এইত, ন্যানোনিডল নিয়ে। আমরা আন্ডারগ্রাড এ থাকতে পার্টটাইম কাজ করেছিলাম একটা কোম্পানিতে। ওখানে কাজ করতে গিয়ে একটা টীমের সাথে পরিচয় হয়। ঢাকা ভার্সিটির একটা টিম আর বুয়েট মিলে এই রিসার্চটা করতেছে। টপিকটাতে বেশ মজা পেয়ে যাই। তারপর সেটাই মাস্টার্সের প্রোজেক্টে এ সিলেক্ট করেছিলাম।
– ভাই রে ভাই, কিভাবে পার!
– কই আর পারলাম, এত পড়ালেখা করে শেষ পর্যন্ত সুই বানাচ্ছি।
– সুইকে সুই বলে ছোট করে দেখার কিছু নাই। 
– আপনি মাষ্টার্স করছেন?
– নাহ, আমি স্বল্পশিক্ষিত মানুষ, বেশী লেখাপড়ার সুযোগ হয়নাই :p

হাটতে হাটতে ওরা লাবনী পয়েন্ট থেকে একেবারে কলাতলী বীচে চলে এসেছে। ধুর, কি বলতেছি, লেগিয়ান বীচ থেকে কুতা বীচে চলে এসেছে। 
– এই জায়গাটা দেখতে অনেকটা কলাতলী বীচের মত। 
– সেটা আবার কোন বীচ? 
– কক্সবাজারের একটা বীচ। আপনি কক্সবাজার গিয়েছেন? 
– গিয়েছিলাম মনে হয় একবার। সে তো অনেক আগে। বুয়েট থেকে বের হবার পরপর মনে হয়। ও হ্যা মনে পড়েছে, কলাতলী বীচ। সবচেয়ে ময়লা বীচটা?
– তা অবশ্য ঠিক বলছেন। মানুষজন বেশী বেশী গিয়ে ময়লা করে ফেলেছে।
– এখানে সমুদ্রের ডেপথ একটু বেশী থাকার জন্য সমুদ্র সৈকত খুব একটা প্রশস্ত না। কলাতলীর ওখানে মানুষজনকে অনেক দুর পর্যন্ত যেতে দেখছি মনে হয়।
– হ্যা। এখানের বীচও তো কম ময়লা না। এর থেকে সেন্ট মারটিন এর বীচ অনেক সুন্দর। 
– সেন্ট মারটিন গিয়েছিলাম আমাদের র‍্যাগ ট্যুরে।
– তাই নাকি?
– হ্যা, সেই ট্যুর। ওই সময়টা পুর্নিমা ছিল। আমরা বন্ধুরা সবাই মিলে বীচেই এক রাত পার করে দিছিলাম। আমার অবশ্য খুব বেশী কিছু মনে নাই। ব্যাচের কয়েকজন সবকিছু আরেঞ্জ করছিল দেখে আমরা বাকিরা দিব্যি আরামে ট্যুর দিছি। তখন আসলে বুঝতাম না যে ঘুরাঘুরি করতে কত মজা। 
– ঘুরাঘুরি করতে কার না ভাল লাগে! 
– ভাল লাগেনা এমন না। মানে ভার্সিটীতে থাকতে ঘুরার অনেক সময় ছিল, পোলাপান ছিল, ঘুরিনাই।
– ঘুরেননাই কেন?
– হলে বসে ঝিমাইছি। যা মিস হয়ে গেছে, গেছে। এখন সেগুলো পোষাতে হবে :p তোমাদের র‍্যাগ ট্যুর কই ছিল? 
– সেন্ট মারটিন এই। আমি অবশ্য যেতে পারিনি। 
– কেন?
– এমনেই
– এমনেই মানে! কেউ কি ইচ্ছা করে র‍্যাগ ট্যুর মিস করে নাকি!
– না, তা না।
– আরেহ ধুর, কি যে বলেন!
– র‍্যাগ ট্যুরে না গিয়ে করছ কি তাহলে?
– বসে বসে গান গাইছি। 
– কি গান?
– আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে
– সেন্ট মার্টিনে তো বন নাই। 
– কে বলেছে নাই, ছেড়া দ্বীপের ওইখানে একটু ঝোপঝাড় আছে, ওটারেই বন হিসেবে ধরেন। 
– হা হা, হইল না, সুন্দরবন গেলে না হয় বলতে পারতা।

আফসানা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল তিনটার মত বাজে। 
– আচ্ছা, আমি এখন উলুয়াতু মন্দিরের দিকে যাব। আপনি যাবেন নাকি?
– যাওয়া যায়, আমার এমনিতেও এখন কাজে মন বসবে না। তার থেকে ওখানে বসে সুর্যাস্ত দেখতে মন্দ হবে না।  

কুতা বীচ থেকে উলুয়াতু মন্দির ট্যাক্সিতে ঘন্টাখানেকের রাস্তা। একা একা গেলে ভালই খরচ পরত। দুইজন হওয়াতে মোটামুটি কমই। চারটার একটু পরে ওরা পৌঁছুল। আজকে সন্ধ্যা হবে সাড়ে ছয়টার দিকে। হাতে প্রায় আড়াই ঘণ্টার মত সময় আছে।

ঢোকার মুখে টিকেট কাউন্টার। ট্যাক্সি ড্রাইভার টিকেট কেটে দিবে বলে টাকা নিয়ে গেল, একটু পরে আবার ফেরত আসল। কেচাক নাচ নামে একটা নাচ হবে। সেটার টিকেট আলাদা করে বিক্রি করতেছে। দেড় লাখ রুপিয়া। ওরা কিনবে কিনা জিজ্ঞেস করল।
– লাখ টাকার নাচ, দেখবা নাকি? 
– দেখা যায়। আপনি দেখবেন? 
– চল।

দুটো টিকেট কেটে ওরা মন্দিরের মধ্যে ঢুকল। মন্দির খোলা থাকে সাতটা পর্যন্ত। মন্দিরের ভিতরে হাটার রাস্তাটা পাহারের কিনার ঘেঁষে বেয়ে বেয়ে গেছে। একটা জায়গায় মোটামুটি ফাকা দেখে দাড়াল ওরা।  আকাশের রংটা হলুদ আর লালের একটা মিক্স হয়ে গেছে। ওরা যেখানে দাড়িয়েছে, সেটা একটা চুড়া। আসলে পুরো মন্দির এলাকাটাই পাহাড়ের চুড়ায়। ক্লিফ ঘেঁষে রাস্তা বানানো, অনেক খাড়া ক্লিফ। লাফ দিলে ভাল একটা দড়ি ছাড়া বাঞ্জি জাম্পিং হয়ে যাবে। ক্লিফের আশেপাশে কিছুদুর পরপর কাগজী ফুলের ঝোপ। বিকালের হলদে আলোতে আফসানাকে দেখতে অন্যরকম লাগছে। আর তার সাথে পিছন থেকে গোলাপি ফুলগুলো, সব মিলিয়ে আলাদা একটা মায়া কাজ করতেছে। কাগজী ফুল দিয়ে দুটো ঝুমকা বানিয়ে দিলে মানাবে বেশ। মনের অজান্তেই গুনগুন করে একটা সুর চলে আসল –

অই দুর পাহাড়ে, লোকালয় ছেড়ে দুরে
মন কেড়েছিল এক দুরন্ত মেয়ে সেই কবে
হিমছড়ীর বাঁকে

– গান গাচ্ছেন নাকি?
– হ্যা, অনেক বড় শিল্পী তো, প্রতিভা চেপে রাখা যাচ্ছেনা।
– দেখছেন, এই জায়গাটা দেখতে হিমছড়ির মত না?
– আরেহ তাইতো, ঠিক বলছ।
– চলেন, কেচাক এর টাইম হয়ে গেছে। আগে আগে না গেলে ভাল সীট পাওয়া যাবেনা। 

কেচাক নাচ দেখতে এইখানে অনেক লোক আসে। জিনিসটা রামায়ণের কাহিনীর উপর ভিত্তি করে বানানো। হনুমানের নেতৃত্বে একদল বানর থাকে। বানরের দল রাবনের সাথে যুদ্ধ করে রামকে জিতিয়ে দেয়। প্রায় শখানেকের মত পার্ফরমার। স্টেজ এ ওরা যেখানে বসেছে, সেখান থেকে দুরে তাকালে সমুদ্র। ক্লিফ এর মাথায় একটা “Door of heaven” এর স্ট্যাচু। Door of heaven হল দুইটা বড় কপাটের মত, মাঝখান দিয়ে খোলা। ইন্দোনেশিয়াতে মোটামুটি সব জায়গায়ই এইটার ছোট/বড় ভার্শন দেখা যায়। তো ওইটা বরাবর তাকালে সমুদ্রের উপর সুর্যাস্ত দেখা যাচ্ছে।

নাচের মাঝখানে কয়েকটা মশালে আগুন ধরায়ে দিল। সুর্য ডোবার পরে যখন একটু অন্ধকার হয়ে গেল তখন পুরো ব্যাপারটাতে একটা জংলী ভাব চলে আসল। আদিম যুগে মানুষজন আগুন জালায়ে চারপাশে যেমন নাচত, ওইরকম। সব মিলিয়ে সেট আপটা সুন্দর, ভাল লাগার মত। পুরো সময়টা বেশ ভালই কাটল।

মন্দির থেকে বের হয়ে, ওরা চিন্তা করছিল কোথায় খাবে। একবার চিন্তা করল উলুয়াতুর আশেপাশে কোথাও বসে খাবে। পরে মনে হল একবারে রিসোর্টের কাছে গিয়েই কোন একটা জায়গায় বসবে। একটা ট্যাক্সি করে রওয়ানা দিল কুতা বীচের দিকে। মাঝপথের রাস্তা ঢাকা চিটাগং হাইওয়ের মত, একটু চাপা আর কি। অন্ধকার হয়ে গেছে যদিও, তারপরও দুই পাশে দোকানপাটের লাইটের আলো আছে। কুতা বীচের কাছে আসতে আসতে রাস্তা ফকফকা, দেখে মনেই হচ্ছেনা রাত। অবশ্য এতক্ষণে ওরাও টের পেল পেট খিদেয় চো চো করছে। 

–x–

সুপ্রিয় দর্শকমন্ডলী, এতক্ষণ দেখছিলেন এ সপ্তাহের নাটক “আজ আফসানার ফ্লাইট”। আজকে এতটুকুই রইল। এখন শুরু হবে রাত দশটার সংবাদ 🙂


Theme by Ali Han | Copyright 2025 Md Imran Hasan Hira | Powered by WordPress