"We human being, always find a solution, maybe not today, but if you really want to solve a problem, there’s always a way" – Ma Yun @ Stanford, 2013

রেজওয়ান সাহেব আর জাদুর বাক্স

by Md Imran Hasan Hira

(এড়িয়ে যাবেন না, আর যারা এই মেসেজটি পাঁচজনকে ইনবক্সে না পাঠাবে, তারা আগামী দিনে সব টাকা পয়সায় লস খাবে :p )

গত সপ্তাহে রেজওয়ান সাহেব হাটতে হাটতে একটা বাক্সে উষ্টা খেলেন। বাক্সটা দেখে মনে হইল জাদুর বাক্স টাইপ। তুলে বাসায় নিয়ে আসলেন, পরিস্কার করে ওটাতে একশ টাকার একটা কচকচে নোট রেখে দিলেন। পরের দিন বাক্স খুলে দেখেন একশ টাকার দুইটা নোট। তাজ্জব বেপার।

বাক্সর মধ্যে টাকা রাখলে পরের দিন সেটা দুইগুন হয়ে যায়। বাহ, মজা তো।

তারপর একশ টাকার নোট দুইটা আবার বাক্সর মধ্যে রেখে দিল। তিন নাম্বার দিন দেখে সেখানে পাঁচশ টাকার নোট। মানে ডাবলের থেকেও বেশী। কেমনে কি! বউরে জিজ্ঞেস করলেন, বউতো অবাক! চাইর নাম্বার দিন এক হাজার টাকার নোট হয়ে গেল। লোকটা হিসাব কনফার্ম করার জন্য, ছেলের মাষ্টারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন এইভাবে টাকা বাড়তে থাকলে কতদিনে কত টাকা হবে। হিসাব করে দেখা গেল, বেশীদিন না, বিশ পঁচিশ দিনেই লাখপতি হয়ে যাওয়া যাবে।

এই খুশীতে রেজওয়ান সাহেব কাওরান বাজারে মাছের আরতে গেলেন, আজকে বড়সর একটা রুই মাছ কিনে বাসার সবাই মিলে খাবেন। মাছের বাজারে ঘুরতে ঘুরতে একটা রুই মাছ পছন্দ হইল। সাত কেজি ওজনের রুই মাছ। জীবনে এত বড় রুই মাছ কখনও কিনেন নাই। মাছ কিনে দোকানদারকে কাটতে দিলেন। এর মধ্যে পাশ থেকে এক লোক বড় করে দিল এক হাঁচি রেজওয়ান সাহেবের একেবারে মুখের উপর। রেজওয়ান সাহেব লোকটা ভাল মানুষ। যদিও চারদিকে করোনার ছড়াছড়ি। উনি অবশ্য এগুলাতে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছেন না। আল্লাহ চায় তো মারবেন, আল্লাহ চায় তো বাঁচাবেন। যাই হোক, বাজারের হাঁচি কাশীর যন্ত্রণায় তাড়াতাড়ি রুই মাছ নিয়ে বাসায় আসলেন।

ওইদিনের পর থেকে রেজওয়ান সাহেবের একটু জ্বর জ্বর ভাব। হাল্কা কাশিও আছে। টিভিতে বলতেছে এই সমস্ত লক্ষণ থাকলে বাড়ীর বাইরে না বেরে হতে। কিন্তু আজকে আবার শুক্রবার, জুম্মার নামাজ কি বাসায় বসে পড়া যায়! জ্বর শরীর নিয়েই কোন মতে গোসল করে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন। দুইদিন পর রেজওয়ান সাহেবের অবস্থা বেগতিক দেখে পরিবারের লোকজন উনাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। ডাক্তাররা টেস্ট করার পর বলল যে রেজওয়ান সাহেব করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। আয়হায়, এখন কি হবে! এই ভাইরাসের তো এখন পর্যন্ত কোন ভ্যাক্সিন নাই। এইদিকে বাক্সের মধ্যে টাকা কিন্তু বাড়তেছে। রেজওয়ান সাহেবের স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে ডাক্তারকে বললেন “ডাক্তার সাহেব, যত টাকা লাগে নেন, তবুও একটা ভ্যাক্সিন দেন”। ডাক্তার সাহেব দেশের সেরা মেডিক্যাল কলেজ থেকে পড়াশুনা করা, অনেক বড় ডিগ্রীওয়ালা ডাক্তার। কিন্তু তারপরও উনাকে বলতে হইল, “দুক্ষিত, আমাদের কাছে এই রোগের কোন চিকিৎসা নাই। আপাতত আমরা ইমার্জেন্সিতে নিয়ে রাখছি, বাকিটা আল্লাহর হাতে”।

হাসপাতালে আরও পাঁচদিন করোনা ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত রেজওয়ান সাহেব বাঁচতে পারলেন না। ভাইরাসের আক্রমণে মারা গেলেন। এদিকে রেজওয়ান সাহেবের স্ত্রী, বাক্স খুলে দেখেন অনেক টাকা। এত টাকা দিয়ে কি হবে, যেখানে মানুষটাই নাই।

রেজওয়ান সাহেবকে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হল। মারা যাবার পর তার রুহ বেশ খুশী। সারা জীবন নামাজ কালাম পড়ে আসছেন। কখনও কারও ক্ষতি করেননাই। করোনার মত রোগ নিয়েও জীবনের শেষ জুম্মা মসজিদে পড়ে আসছেন। ঝামেলা বাধল হাশরের ময়দানে যখন হিসাবের খাতা খুলা হল।

ডান কাঁধের ফেরেশতা বলল – “এই লোক জীবনে অনেক পুণ্য করেছে।” একে একে সব পুণ্যকাজের বর্ননা দিল। তারপর যখন বাম কাঁধের ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করা হল, সে বাধা দিয়ে বলল – “এই লোক সারাজীবন ভাল কাজ করছে। শুধু শেষে এসে নিজের করোনা ভাইরাস দিয়ে শত শত লোককে আক্রান্ত করেছে” । রেজওয়ান সাহেব তখন বলল – “আমি তো জানতাম না” ।বাম কাঁধের ফেরেশতা তখন বলবে – “কি জানতা না, তোমার এলাকার ডাক্তার বলছিল তোমাকে করনার জ্বর কাশি নিয়ে মসজিদে না যাইতে, বল বলছিল কিনা!” । রেজওয়ান সাহেব উত্তর দিলেন – “তা বলছিল”। ফেরেশতা ধমক দিয়ে বলল – “তাহলে এত সতর্ক করার পরেও রোগ নিয়ে মানুষজনের মাঝে গেছ কেন?” রেজওয়ান সাহেব বললেন – “আমি তো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য গিয়েছি, আমাকে মাফ করে দেওয়া যায়না?” তখন উত্তর আসবে – “বারবার বলা সত্ত্বেও নিজের করোনা ভাইরাস বাকিদের ভিতরে ছড়িয়ে দিয়ে এতগুলো মানুষের মৃত্যু ঘটানোর শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।” শেষ পর্যন্ত রেজওয়ান সাহেব বেহেস্তে যেতে পেরেছিলেন কিনা, সেটা জানার সৌভাগ্য হয়নি। কারন তার আগেই ঘটনা বর্ননাকারী নিজেই করোনাতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চলে গিয়েছেন।

যারা এতদূর পড়ে আসছেন, তাদের জন্য

  • আগামী কয়েক সপ্তাহ যতটুকু সম্ভব মানুষজনের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। রোগশোক থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য এটাই দরকার এখন। প্যানিক হতে হবে এমন না, তবে নিজেকে সেফ রাখতে তো দোষের কিছু নাই।
  • ঘরের বাইরে গেলে যত কম পারা যায় বিভিন্ন জিনিস ছোঁয়া থেকে বিরত থাকুন।* বাইরে থেকে আসার পর সাবান/স্যানিটাইজার দিয়ে (মিনা কার্টূনের মত) ভাল করে হাত কনুই পর্যন্ত পরিষ্কার করুন।
  • আপনার জ্বর, কাশি থাকলে সেটা যাতে বাকিদের মাঝে ছড়াতে না পারে, তার জন্য আপনাকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু শুধু করোনা ভাইরাসের জন্য বেহেস্তে যাওয়ার সুযোগ হেলায় হারাবেন না।
  • যারা বলছে এগুলা কোন সমস্যা না, তাদেরকে বুঝান যে রোগ শোক থেকে দুরে থাকাটাও পবিত্রতার অংশ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Theme by Ali Han | Copyright 2025 Md Imran Hasan Hira | Powered by WordPress