আমার বন্ধু Ibrahim Rashid একটা ট্যুর কাহিনী নিয়ে এই পোষ্ট। আমাদের যাওয়ার কথা ছিল বান্দরবন, কিন্তু চলে গেলাম সুনামগঞ্জ, তাও আবার কোন কিছু আগে থেকে বুক না করে, আর এক টি-শার্টের ট্রিপ, মোবাইলে ৩০% চার্জ 😛 শুনে মনে হচ্ছে পাথুরে সভ্যতা ২০০৯ এর কাহিনী, কিন্তু আসলে ২০১৯ এর 😛
ইব্রাহিম আর আমি মিলে বেশ কয়েকমাস ধরে বান্দরবন যাওয়ার প্লান করতেছি। সকাল বেলা ক্যামেরা ট্যামেরা রেডি করে, পাওয়ার ব্যঙ্ক চার্জ দিয়ে, ব্যাগ সুন্দর করে গুছিয়ে রেখে, বুয়েট ক্যাম্পাস গেসি। আশা ছিল, রাত্রে বেলা বান্দরবন যাব। কিন্তু ক্যাম্পাসে ঘুরতে ঘুরতে রাত হয়ে গেলে, তাড়াহুড়া করে আমরা সেগুলোর কোন কিছু না নিয়েই সায়দাবাদ বাস ষ্টেশন চলে যাই। বান্দরবনের কোন বাস নাই, আমরা কাউণ্টারের পর কাউন্টার খুজে যাচ্ছি। তারপর শেষমেশ দেখি সিলেটের লাস্ট বাস আছে, সেটাতেই উঠে পড়ি।
সকালবেলা শাহজালাল(রঃ) এর মাজারে একটু সালাম ঠুকে, সেখান থেকে একটা ভাঙ্গারি বাসে করে চলে যাই সুনামগঞ্জ। সুনামগঞ্জ গিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দেখি সরকারি বাংলো। দুই বন্ধু মিলে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলাম বাংলোতে কিভাবে থাকা যায়। ওখানের মামা সেটা টের পাবার পর বলল জেলা প্রশাসকের অনুমতি লাগবে। তারপর আর কি, আমরা বুঝতে পারলাম যে বাংলোতে আমাদের থাকার ভাগ্য নেই। হোটেল খুঁজার জন্য সামনে এগোলাম। হোটেল খুঁজা নিয়ে কাহিনী।
একটা “হোটেল” পাইলাম ২০০ টাকা রুম / নাইট। ইব্রাহিম ছেলেটা আম্রিকান কোম্পানিতে কোটি কোটি টাকা বেতন পায় তখন। তো, হোটেলের ম্যানেজার, দাম বলার পর, আমি আর ইব্রাহিম প্রায় একসাথেই বলে বসলাম যে একশ টাকায় দিতে পারবে কিনা। সেই লোক আমাদের দিকে এমনভাবে তাকাইল, আমরা নিজেরাই বুঝতে পারলাম একটু বেশীই কম বলে ফেলছি। মুলামুলি করে ১৫০ টাকায় হোটেল ঠিক করা হইল। প্লান হইতেছে সুনামগজ ঘুরব। হোটেলে ফ্রেশ হয়ে হুট করে মাথায় আসল টাঙ্গুয়ার হাওরে নৌকায় থাকব। তারপর বের হয়ে মটর সাইকেলে করে হাওরের ঘাটে গেলাম।
হাওরে তখন পর্যটকের আনাগোনা নাই বললেই চলে। দুইটা নৌকা আছে। তারা আমাদের দুইজনের জন্য এক রাতের ভাড়া চাইল ৩৫০০ টাকা। আমি আর ইব্রাহিম বলি ৬০০ টাকা। মামারাও রাজী হবে না, আর আমরাও ঠিক করছি নৌকা না পাইলে দরকার হইলে ঘাটেই ঘুমায়ে থাকব। নাইলে আশেপাশের বাড়িতে গিয়া বলব রাতটা থাকা যাবে কিনা। নৌকার লোকগুলা আমাদের উপর আশা ছেড়ে চলে গেল। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায়। হঠাত মাথায় একটা বুদ্ধি এল। ঘাটে এমনি বেশ কিছু নৌকা বাধা ছিল। সেগুলার গায়ে ফোন নাম্বার লিখা। ওইগুলাতে কল দিলাম। একজন রিসিভ করে বলল আসতে পারবে, ৮০০ টাকা লাগবে। কিন্তু উনার দেরী হবে, হাঁটে গেছে বাজার করতে। বাজার সদাই ঘরে রেখে উনি আসবে। আমরা তো রাজী, কিছু একটা পাওয়া গেছে। বাচ্চা পোলাপানের মত আমরা বিভিন্ন নৌকার উপর এলোপাথাড়ি ঘুরতে ঘুরতে, মাঝিভাই আসল একেবারে সুর্যাস্তের সময়। আর আমরাও রওয়ানা দিলাম টাঙ্গুয়ার হাওরের ভিতরে। ২০ জনের সাইজের নৌকায় আমরা তিনজন।
রাত্রে বেলা পুর্নিমার কড়া চাঁদ। হাওরের মধ্যে আমরা আমাদের চড়া গলায় সঙ্গীত সাধনা করছি (চিৎকার করছি)। রাত্রে বেলা একটা ওয়াচ টাওয়ারে থেমে স্থানীয় এক বাসায় খাবারের ব্যাবস্থা করল আমাদের মাঝি ভাই। ভাত, আলুভর্তা আর গ্রামের মত করে রান্না করা দেশী মুরগী। পেট পুরে খেয়ে আবারো নৌকায় উঠলাম। মাঝি ভাই তাপর নৌকা চালাতে চালাতে একটা বড় বাধের কাছে আনল, যেইখানে একটা চায়ের দোকান ছিল। সেখানে চা বিস্কুট খাইলাম আর পাঁচ টাকা/ঘণ্টা রেটে মোবাইল চার্জ দিলাম 😛
ঘুমের ব্যাবস্থা নৌকার মধ্যেই। আমরা কাঁথা বালিশ নিয়ে নৌকার ছাদে উঠে পরলাম। ব্যাপারটা শুনতে যতটা উত্তেজনাময় লাগছে, বাস্তবে তার থেকেও রোমাঞ্চকর ছিল। সকাল বেলা উঠে দেখি মশাদের চুমু খেয়ে মোটা হয়ে গেছি 😛 যাই হোক, ওদের ভালবাসার স্মৃতি নিয়ে আমরা আবার ফিরতি পথ ধরলাম। সকালের মিষ্টি রোঁদে হাওরের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে খারাপ লাগছিল না।
ভিডিও দেখলেই বুঝা যাবে, শটগুলা সব মোবাইলে তুলা। আর ব্যাকগ্রাউন্ডের ভীষণ প্রিয় এই গানটি আমাদের সঙ্গীত “সাধনার” অবিচ্ছেদ্য অংশ 😃 😃
ভিডিও: https://youtu.be/yNIi_LIhLt4
Leave a Reply