"We human being, always find a solution, maybe not today, but if you really want to solve a problem, there’s always a way" – Ma Yun @ Stanford, 2013

আমাদের প্রথম সমুদ্র দর্শন আর প্রথম হানিমুন ট্রিপ

by Md Imran Hasan Hira

তখন বিয়ের দুই মাস হয়ে গেছে, হানিমুনে যাওয়া হয়নাই। যাওয়া তো দুরের কথা, কোন প্লানই নাই। একদিকে করোনার লকডাউন অন্যদিকে সামাজিক প্রত্যাশা, এই দুইয়ের চাপাকলে অতিষ্ট হয়ে হয়ে দিন গুনছি কবে লকডাউন শেষ হবে। এরই মধ্যে হঠাত একদিন রাত সাড়ে এগারটায় মনে হইল দুইজন মিলে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া উচিত। এবং পাঁচ মিনিটের মাথায় আমরা ঠিক করলাম যে চট্টগ্রাম যাব।

ঢাকার “কাছেই” অদূর মিরপুর থেকে সব কিছু গুছায়ে এই রাত্রিবেলা চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে কিনা, সেটা চিন্তা করে সারতে পারিনি, দেখি বউ লাগেজ গুছায়ে রেডি। সারাজীবন শুনে আসছি মেয়েরা রেডি হতে নাকি ঘণ্টা পার হয়ে যায়, আর আমার বউ, আইডিয়া আসার দশ মিনিটের আগেই রেডি হয়ে যায়। যাই হউক, ১১:৪০ এ আমরা রুম থেকে বের হয়ে দেখি আব্বু সোফায় বসে টিভি দেখতেছে। আমাকে লাগেজ হাতে নিয়ে বের হতে দেখে মজা করে জিজ্ঞেস করল যে ঝগড়া করে বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছি কিনা :p আমি বললাম যে চট্টগ্রাম ঘুরতে যাব। কিছুক্ষনের জন্য তব্দা খেয়ে তারপর আমাদেরকে জিজ্ঞেস করল, কিভাবে যাব কোন প্লান আছে কিনা। আর আমাদের উত্তর – সায়েদাবাদ গিয়ে যা পাই সেটাতেই চড়ে বসব। আব্বু কিছুক্ষণ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে তারপর একজনের ফোন নাম্বার দিয়ে বলল এইটা একজন টিকেট ম্যানেজার এর নাম্বার, মিরপুর ১৪ থেকেই তার বাস ছাড়বে, রাত বারটায় লাস্ট বাস। আমরা তাড়াতাড়ি গেলে ধরতে পারব। আমরা দৌড়ায়ে একটা রিক্সা নিয়ে কোনমতে সেই বাস ধরলাম। বাসে উঠেই দুইজন ভাবতেছিলাম জাস্ট আধাঘণ্টা আগেই রুমের বিছানায় বসে ঝিমাচ্ছিলাম, আর এখন ট্রিপের উত্তেজনায় ঘুম গায়েব।

অন্যদিকে যাদের বাসায় যাব, তাদেরকেও বলা হয়নি। এবং সেকথা মনে পড়ছে বাসে উঠার ঘণ্টা দুয়েক পর। রাত দুইটায় সময় বন্ধু রাকিবকে ফোন দিয়ে বললাম আমরা আসতেছি। সে বলে কোথায় আসতেছিস? বললাম যে তোদের বাসায়। তারপর বেচারা বলে “নতুন বউ নিয়া আসবি, আমাদের গুছানোর এক বেলা টাইম তো দিবি”। আমি বললাম, আমরা নিজেরাই জানতাম না যে আমরা আজকে চট্টগ্রাম যাব। বন্ধু আর বন্ধুপত্নীকে এই রকম কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে ওদের উপর অনেক মায়া হচ্ছিল। কিন্তু আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে তারা সেই ভোর বেলা বাস স্টেশনে এসে পরেছিল আমাদেরকে রিসিভ করতে।

আমাদের প্লান, দিনের বেলা ঘুরাঘুরি করে রাতের বাসে ঢাকা ফেরত যাব। বাস স্টেশন থেকে সরাসরি চলে গেলাম নেভাল একাডেমী’র রাস্তাটাতে। চট্টগ্রাম কলেজে পড়ার সময়টাতে এই রাস্তার পাশে বসে কর্নফুলী’র মোহনার জাহাজ গুনেছি অনেক 😀 যাই হোক, আমরা চারজন চা নিয়ে বসলাম। চা খেতে খেতে কর্নফুলীর উপর দিয়ে সুর্য উঠল। শিরোনামহীনের কথা মেনে সুর্যটাকে খেয়াল রেখে, একটু পর আমরা পতেঙ্গা বীচের দিকে রওয়ানা দিলাম। সকাল সকাল যাওয়ার কারনে পুরা বীচ ফাকা। নিজের মনে করে হাঁটাহাঁটি করলাম। কিছুদূর গিয়ে এক অখাদ্য চা খেয়ে চাওয়ালার গুন নিয়ে কিছুক্ষণ প্রশংসা করলাম। তারপর হাঁটতে হাঁটতে দেখি পাশে হাল্কা বেগুনী রঙের কলমী ফুল। সেটা দিয়ে আমরা কিছুক্ষণ ফটোসেশন করে চায়ের স্বাদ উসুল করলাম 😀

দুপুর বেলা বাসায় আসতে আসতে আমি ঘুমে টাল। কিন্তু বাসায় ঢুকে বলি, এ কি! এত পরিপাটী করে বাসা সাজিয়ে রাখছে, দেখেই চোখ জুড়িয়ে গেল। আমাদের জন্য সাজানো রুমটাতে ঢুকে মনে হল, এইটা হানিমুন ট্রিপের রুমের থেকে কোন অংশে কম না 😀 😀 এত অল্প সময়ের মধ্যে খাবার দাবারও রেডি হয়ে গেল। খাওয়া দাওয়া করে ঘণ্টাদুয়েকের ঘুম দিলাম। প্লান হল, উঠে সবাই মিলে ভাটিয়ারী যাব। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে আবার খেয়েদেয়ে বের হতে হতে বিকাল হয়ে গেছে। তাও আমরা আশা ছাড়লাম না। নেভাল একাডেমী’র ভিতরে ছিমছাম জায়গায় হাটাহাটি করলাম। তারপর মেরিন ড্রাইভ এর রাস্তাটার পাশে দিয়ে যাওয়ার সময় সমুদ্রের উপর সুর্যাস্তর আগের দৃশ্য দেখে আমরা বীচে নেমে পরলাম।

দুজনের প্রথম সমুদ্র সৈকতে সুর্যাস্ত দেখা। যতবার সমুদ্রের কাছে এসেছি, সবসময়েই অনেক যুগলদের হাত ধরে হাঁটা দেখে হিংসা হত। মনের ভিতরে পুষে রাখা সেই হিংসা দমানোর সুযোগ পেয়ে আমিতো যারপরনাই আনন্দিত। ভাবছি বউকে বলব, হাত দাও। বউ আমার মনের কথা বুঝতে পেরে নিজেই আমার হাত ধরে হাটা শুরু করল। এমন বউই তো চেয়েছিলাম 😀

আমাদের “হাটাহাটি”র দৃশ্য ধারণ করতে করতে অন্য কাহিনী হল। কাকতালীয়ভাবে ওইদিনই আমাদের চট্টগ্রাম নেভী স্কুলের রিইউনিয়ন ছিল চট্টগ্রাম বোট ক্লাবে। দৌড়াদৌড়িতে ভুলেই গেছিলাম রিইউনিয়নের কথা। রাকিব মনে করায়ে দিল। সন্ধ্যা হয়ে যাবার পর চলে গেলাম সেখানে। অনেকদিন পর স্কুলমেটদের চেহারা দেখে ভাল লাগল। পোলাপান সবগুলা এখনও আগের মতই আছে। ব্যস্ততার কারনে সবার সাথে সবসময় যোগাযোগ থাকে না। কিন্তু এরকম কিছু ইভেন্টের কারনে হলেও, দেখা হলে খুব ভাল লাগে। আরও ভাল লাগল যে বউয়ের সাথেও অনেকের পরিচয় হল 😀

রাতের বাসে ঢাকা ফেরত আসার কথা থাকলেও রাকিব আর আলভীর যত্নআত্তিতে সেটা পারলাম না। আড্ডা শুরুর করার পর কখন যে রাত পার হয়ে গেল টের পেলাম না। সারারাত ধরে গানের আসর হল। আমি ছাড়া বাকিরা ভাল গায়। আমার বেশী খুশী লাগল কারন অনেকদিন পর গলা খুলে চিৎকার করলাম এবং কেউ জাজ করল না :p সারারাত বকবক করে সকাল বেলা জম্বীর মত বাসে করে রওয়ানা দিলাম ঢাকার অদূরে সেই মিরপুরের উদ্দেশ্যে। আর এভাবেই শেষ হল আমাদের “অত্যধিক ঘটনাবহুল” প্রথম হানিমুন(লাফঝাপ) ট্রিপ 😀


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Theme by Ali Han | Copyright 2025 Md Imran Hasan Hira | Powered by WordPress