"We human being, always find a solution, maybe not today, but if you really want to solve a problem, there’s always a way" – Ma Yun @ Stanford, 2013

Who has the biggest brain?

by Md Imran Hasan Hira

২০০৭ সালের দিকে ক্রিস্টিয়ান সেগারস্ট্রালে নামের এক লোক প্লে-ফিস নামে একটা কোম্পানি শুরু করে। কো ফাউন্ডার হিসেবে ছিল সেবাস্টিয়ান, সামি আর সুক্রী নামের আরও তিনজন। এদের মেইন আপ্লিকেশন ছিল সোশ্যাল গেম বানানো। একবছরের মাথায় তারা ১৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার এঁর ফান্ডিং পায়। এই কোম্পানির বানানো প্রথম গেম হল Who has the Biggest Brain? সেই ২০০৭ /০৮ এ ফেসবুক এর শুরুর দিকের সময়ে, মিলিয়নের উপরে ডেইলি ইউজার নিয়ে এই গেমটি টপ তালিকায় নাম লিখায়। এই রকম পপুলার অবস্থা দেখে, বছরখানে পরে ২০০৯ সালে ইলেক্ট্রনিক্স আর্টস ৪০০ মিলিয়ন ডলারে প্লেফিশ কে একূয়ার করে নেয়। তারপর যা হবার তাই হয়। ২০১৩ সালের মধ্যে প্লেফিশের সব ফাউন্ডাররা কোম্পানি ছেড়ে দেয় এবং এদের বানানোর সব গেমগুলা নামিয়ে ফেলা হয়।

অন্যদিকে ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে আমরা বুয়েটে ক্লাস শুরু করি। কম্পিউটার সায়েন্স ডিপার্টমেন্ট পড়ি। প্রথম সেমিস্টারে আমার কম্পিউটার ছিল না। রুমমেট Tarek ভাই আর Sadik ভাইয়ার কম্পিউটারে বসে বসে সারাদিন গেম খেলি। ব্র্যাকনেটের আগের যুগ, যেটাকে আমরা রুমমেটরা প্রস্তর যুগ বলতাম, গ্যালাক্সি নেট ছিল তখন হলে। ২ কেবিপিএস স্পীড। তাও আবার শেয়ারড। স্পীড নিয়ে কোন সমস্যা হলে গ্যালাক্সি নেটের কর্নধার শীবলী ভাই এসে বলতেন “মানুষজন তো সমানে ডাউনলোড করছে, আপনাদের কি সমস্যা?” যাই হোক, এই স্পীডে ফেসবুকে ফ্লাশ গেম লোড হতে লাগে দশ মিনিট। গেমের নাম সদ্য পপুলার হওয়া Who Has the biggest Brain?

এই খেলায় চারটা ধাপ। প্রতিটা ধাপ এক মিনিট করে। প্রথম ধাপে কিছু বক্স থাকবে, যেগুলা এক নজরে দেখে বলতে হবে কয়টা বক্স আছে। দ্বিতীয় ধাপে কিছু সরল অঙ্ক থাকবে। তৃতীয় ধাপে কিছু ছবি দেখানো হবে, সেগুলার ক্রম ঠিক রেখে মনে রাখতে হবে। আর চতুর্থ ধাপে চলন্ত নাম্বার এঁর বেলুন এ ক্লিক করে ফাটাতে হবে। এঁর মধ্যে আরও দুটো মজার ধাপ ছিল যেখানে দাঁড়িপাল্লার মত করে কোন অবজেক্ট বেশি ভারী বের করতে হয় আর কার্ডের আর একটা। সব ধাপেই যত তাড়াতাড়ি সঠিক উত্তর দিবে, তত বেশি প্রশ্ন আসবে, মানে বেশী স্কোর হবে, আবার ডিফিকাল্টই লেভেলও বাড়বে।

আমি রশীদ হলের ৪০৬ নম্বর রুমে বসে গেম খেলতাম, রুমমেট অমি ছিল, সেও খেলত। অন্য হলে Ashiq Uz Zoha খেলত। আমরা সবাইই মোটামুটি এভারেজ মানের। গেমের ভিতরে র‍্যাঙ্কলিষ্ট ছিল যেখানে বাংলাদেশ কিংবা ওয়ার্ল্ড র‍্যাঙ্ক দেখা যাইত। গেমটা এমনই আডীক্টিভ, একবার শুরু করলে কয়েক রাউন্ড না খেলে উঠা যায়না। রিসেন্ট টাইম চিন্তা করলে ফ্ল্যাপি বার্ডের মত আডীক্টিভ ছিল। যাই হোক, একদিন বিকেলে খবর পেলাম, আমাদের পাঁচ তলায় এক ভাইয়া থাকেন, নাম Alif ভাই। উনার নাকি বিগেষ্ট ব্রেইন এ চারপাশের ভিতরে হাইয়েষ্ট স্কোর। আচ্ছা ঠিক করলাম তাইলে উনার কাছ থেকে ট্রেইনিং নিব। আমি আর অমি মিলে উনার রুমে গিয়ে বললাম ভাই গেমপ্লে দেখব। তারপর আলিফ ভাই যেই খেলা দিল, বিশ্বাস করবেন না রাসেল ভাই, উনার রুম থেকে ফিরে আমি আগের থেকে মিনিমাম ২০-৩০% বেশী স্কোর করা শুরু করলাম। ভাই আসলেই লিজেন্ড।

এই রকম খেলতে খেলতে ফার্ষ্ট সেমিস্টার শেষ। আমার উপরে আমার আব্বু আম্মুর অত্যন্ত শক্তপক্ত বিশ্বাস আমি ইলেক্ট্রনিক্স পাইলেই সেটা নষ্ট করি। সেকেন্ড সেমিস্টারে যখন আব্বুর মোটামুটি ভরসা হইছে আমি কম্পিউটার নষ্ট করে ফেলবনা, তখন একটা ডেস্কটপ কম্পিউটার পাই। এই দিকে আবার CSE102 কোর্সে তখন গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস বেইজড প্রোজেক্ট করতে হবে। এতদিন কনসোলের ব্ল্যাক স্ক্রিনে স্টার আর রম্বস প্রিন্ট করতে করতে নাকের পানি চোখের পানি একাকার, OpenGL বেসড প্রোজেক্ট কিভাবে বানাবো! বেশ কিছুদিন চিন্তা করে কোন প্রজেক্ট পাইনা। প্রজেক্ট মাথায় আছে, কিন্তু সাহস পাইনা। রুমমেট অমি সাহস দিল।

শ্রদ্ধেয় Nirjon স্যার এর বানানো iGraphics আমাদের জন্য তখন আশীর্বাদ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই প্রজেক্ট এখনও ডিপার্টেমেন্টে ইউজ হচ্ছে। প্রায়ই প্রাউড হয় যে এরকম স্যারদের ক্লাস পাইছি। স্যার তখন সবে হায়ার স্টাডি’র জন্য বাইরে যাবেন। পরে আমাদের কোর্সে Nusrat ম্যাডাম ছিলেন আমার সুপারভাইজর। গেম বানানো শেষ করে সাবমিশনের দিনের টান টান সাসপেন্স বলে বুঝানো যাবে না। গেম ঠিকমত চলবে কিনা, এইটা সবথেকে বড় টেনশন। এক রাউণ্ড পুরা খেলতে মিনিমাম ছয় সাত মিনিট সময় লাগে। তার উপর গেমে ডিফিকাল্টই লেভেল আছে। প্রথমে ভাল না করলে ডিফিকাল্ট লেভেল আসবে না, না আসলে আমি যে হাই ডিফিকাল্টই লেভেলের জন্য কষ্ট করছি, সেটা ম্যাডামকে দেখানো যাবে না। সাথে কোড দেখানোর জন্য সময় আর সেগুলা নিয়ে প্রশ্ন উত্তরের সময়। সব মিলায়ে টাইট, পার স্টুডেন্ট খুব বেশী সময় থাকবে না ম্যাডামের হাতে। এইগুলা আগে থেকে প্লান করে মজা করে গেমের মধ্যে চিটকোড দেবার অপশন রাখছি যাতে করে দ্রুত এগুলা দেখাতে পারি। প্রোজেক্ট ডেমনস্ট্রেশনের সময় ঠিকই সেই কাহিনী হল, ম্যাডামকে বাকি লেভেল গুলা যাতে দেখাতে পারি, সেজন্য চীটকোড দিতে হল। সমস্যা হল, মজা করে চীটকোড দিয়েছিলাম ম্যাডাম এর ফার্ষ্ট নাম দিয়ে, যেটা পরে চেঞ্জ করা হয়নাই। উনার সামনে যখন সেটা টাইপ করতেছি, তখন মান সম্মান যাবার উপক্রম। মান সম্মানের মাথা খেয়ে গেমের বাকি অংশ দেখালাম। এবং কোর্স শেষে ভাল নম্বর দিয়ে ম্যাডামও মন খুশি করে দিলেন।

এইগুলা ২০০৮ এর অগাস্ট থেকে অক্টোবরের কাহিনী। আজকে বহু বছর পর পুরানো ডিস্ক থেকে হঠাত করে Brain.zip ফাইল খুজে পেয়ে যখন চিন্তা করতেছি এটা ভাইরাস কিনা, তারপর মনে হল, আমি তো লিনাক্সে। যাই একটু আনজিপ করে দেখি কি আছে। খুলে দেখি ওমা! iMain.cpp । ফাইলটা ওপেন করলাম, তারপর কি আর বলব। কোডের দিকে চেয়ে থেকে তারপর কিছুক্ষণ বালিশে মুখ গুঁজে কান্না করলাম। এই রকম বাজে কোড কোন মানুষ লিখতে পারে, আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। যাই হোক আবেগ সামলে রেখে, গুগল সার্চ দিলাম Windows.h এর ম্যাক বিকল্প কি? এবং যথারীতি আমার মত এই গান্ডু প্রশ্ন যারা আগেও করছে, তাদেরকে ঝাড়ি খেতে দেখে, নতুন সার্চ দিলাম Mac এর wine আছে কিনা। দেখলাম Whisky নামে একটা অ্যাপ আছে, যেটা উইন্ডোজ এর এক্সিউট্যাবল চালাতে পারবে। বেশ কিছুক্ষণ গুঁতাগুঁতি করে ১৬ বছর আগের নিজের বানানো প্রথম গেমের ইন্টারফেস আবার দেখতে পারে আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম। বউ পাশ থেকে জিজ্ঞেস করল কাহিনী কি, বললাম যে বাচ্চাকালের বানানো প্রথম গেম চালাইতে পারছি 😛 তারপর সে আগ্রহ নিয়ে কয়েক রাউণ্ড খেলল 😃

পুরো বুয়েট সময়গুলাতে ল্যাবক্লাসগুলাতেই আমার সবথেকে পছন্দের সময় কাটাইছি। কারণ হয়ত আমি ছোটবেলা থেকেই জিনিসপাতি বানাতে পছন্দ করি। আর ল্যাব ক্লাসগুলাতে এই জিনিসটা প্রাকটিস করা যায় বেশী। যদিও ভার্সিটিতে থাকতে ল্যাবের পেরা/ক্রেডিট রেশিও হাই থাকার কারনে অনেক “সমস্যা” পোহাতে হয়েছে। কিন্তু ডিপার্ট্মেন্টাল প্রায় প্রতিটা ল্যাবই জীবনের সুন্দর স্মৃতি হয়ে থাকবে।

Gameplay of windows version running on Mac


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Theme by Ali Han | Copyright 2025 Md Imran Hasan Hira | Powered by WordPress