গুরাহ রাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। খুব একটা বেশী বড় না। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স এর বিমান সাই সাই করে উড়িয়ে নিয়ে চলে আসছে। অনেকটা হানিফ এন্টারপ্রাইজ এর বাসের মত। জাভা সাগরের উপর দিয়ে আসার সময় অনেক গুড়ি গুড়ি নৌকা চোখে পরছে। বিমান নামার আগে পাইলট এর কথামত কোমড়ের দড়ি(!) শক্ত করে বেধে নিয়েছিল আফসানা। ল্যান্ড করার পর সেটা আলগা করে নিল। নামার আগে চেক করে নিল পাসপোর্ট সাথে আছে কিনা। এখন প্রথমেই যে কাজ করতে হবে, ডলার ভাঙ্গিয়ে রুপিয়াহ বানাতে হবে। এয়ারপোর্ট এর ভিতরে একটা মানি এক্সচেঞ্জ আছে। কিন্তু ওইটাতে যে পরিমান ভিড়, তাতে সারাদিন লাগবে মনে হচ্ছে। আস্তে আস্তে এক্সিট দিয়ে বের হয়ে বাইরে আর একটা এক্সচেঞ্জ খুঁজে বের করল। এখানকার কারেন্সির যা অবস্থা, মানি এক্সচেঞ্জ করে তো সে প্রায় কোটি টাকার মালিক হয়ে গেল।
দেনপাসা শহরটা বেশ বড়ই। কি অদ্ভুত একটা নাম, শহরের নাম কেউ এমন দেয় ! দেনপাসা হচ্ছে বালির রাজধানী। ইন্দোনেশিয়ার ট্যুরিস্টিক এলাকাগুলোর মধ্যে বালি দ্বীপ একেবার টপের দিকে। জিওগ্রাফিকাল লোকেশন চিন্তা করলে এই দ্বীপের আবহাওয়া মোটামুটি মনসুন ক্লাইমেট এর মধ্যে পরে। সতের হাজার দীপের একটা দেশ, ম্যাপের উপরে ডানে বামে যেখানে তাকাই, সেখানেই খালি দ্বীপ। মনে হয় পানির মধ্যে থেকে এক গাদা ব্যাং মাথা উঁচু করে তাকিয়ে আছে। সম্ভবত বেশী বেশী ভূমিকম্প হবার কারনেই এমন হয়ে গেছে, কে জানে!
আফসানা’র থাকার জায়গা হচ্ছে পুলম্যান রিসোর্ট। ন্যানোটেকনোলজির একটা কনফারেন্সে এসেছে ও। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে এইখানে ওদের কাজ একসেপ্ট হয়ে যাবে, ভাবতেই পারেনি। কনফারেন্স অথরিটি থেকে ও যখন কনফার্মেশন ইমেইল পেয়েছিল, কিছুক্ষণ হা করে ছিল। থিসিস সুপাভাইজরও বলল প্রেজেন্ট করে আস। এই কনফারেন্সটা প্রতিবার অনলাইনে করে। এবারই প্রথম ফিজিক্যাল ভেন্যুতে আরেঞ্জ করতেছে। সমুদ্র সৈকতের একেবারে পাশে। এয়ারপোর্ট থেকে একটা ট্যাক্সি নিয়ে রিসোর্টে চলে এসেছে সে।
তাড়াহুড়া করে কাজকর্ম গুছাতে গিয়ে ট্রিপের ব্যাপারে তেমন কোন প্লানই করতে পারেনি আফসানা। কনফারেন্স তিনদিনের। যেদিন শেষ, সেদিনই রিটার্ন করলে টিকেটেরে দাম বেশী দেখে দুইদিন পরের টিকেট নিয়েছে ও। ট্রাভেল এজেন্সি থেকে বলল দুইদিন এক্সট্রা থাকা লাগলেও, সব মিলিয়ে এটা ভাল ডিল। খারাপ হয়নাই, লাস্টের দিন এমনিতেও ওর প্রেজেন্টেশন নাই, সব মিলায়ে এক্সট্রা তিন দিন ফ্রি পাওয়া যাবে। হোটেলে পৌঁছে, ফ্রেশ হয়ে পেপারের কাজকর্মে বসে গেল।
বিকালে হতে হতে খেয়াল করল পোস্টার প্রিন্ট করতে হবে। যতটুকু এডিট করেছে, সেটাই এখন প্রিন্ট না করালে আবার দোকান খোলা পাওয়া যাবে কিনা সেটাও একটা কথা। আশেপাশে প্রিন্ট করার জায়গা খুঁজতে গুগল ম্যাপে সার্চ দিল, কিছু দোকানের নাম দেখাচ্ছে। কোয়ালিটি কেমন হবে কে জানে। মোবাইলের ম্যাপে ও কিছুক্ষণ আশেপাসের জায়গা গুলো ব্রাউজ করে নিল, তাইলে নেট না থাকলেও ক্যাশ থেকে ম্যাপটা কাজ করবে। পেনড্রাইভে পোস্টারের ফাইলগুলা সেভ করে আফসানা বের হয়ে গেল হোটেল থেকে।
প্রথম যে দোকানটা দেখেছিল ম্যাপে, সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর আর একটা দোকানে দেখল প্রিন্ট করা যায়। ওটাতে ঢুকল আফসানা। ঢুকতে ঢুকতে পাশ থেকে শুনল একজন বাংলায় ফোনে কথা বলতেছে, একপেশে কথা যদিও।
– হ্যালো মামা, শুনতে পাচ্ছেন? মামা, আপনাদের বাসা নাম্বার যেন কত?
– আচ্ছা, আমি আর একবার বলি ঠিকানা, ঠিক আছে কিনা দেখেন তো।
– না মামা কিছু না, এমনেই জিজ্ঞেস করতেছি।
– জি আমি ভাল আছি, ইজতেহাদ আর ইরতিদা কেমন আছে?
– জ্বি মামা, এখন রাখি। দোয়া করবেন।
ফোনে কথা বলছিল যে, কিচ্ছুক্ষণ পর সে কাউণ্টারে এসে দুইটা পোষ্টকার্ড নিয়ে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করল যে এই দুটো বাংলাদেশে পাঠাতে কত খরচ পরবে। আফসানা একটু ওয়েট করল তার পোষ্টকার্ড পাঠানো শেষ পর্যন্ত, তারপর আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল –
– আরেহ ভাই, আপনি বাংলাদেশী নাকি ?
– হ্যা, আপনি?
– বাংলা শুনে তো বুঝতেই পারছেন।
– হা হা, সেটা ঠিক।
– ঘুরতে এসেছেন?
– হ্যা, আপনি?
– আমি একটা কনফারেন্সে আসছি। পোস্টার প্রিন্ট করাব, এইজন্য ভাল একটা দোকান খুজতেছি।
– কিসের পোস্টার?
– কনফারেন্সের কাজকর্ম আর কি।
– উড়ি বাবা! গবেষনা কাজকর্ম, সে তো অনেক কঠিন কাজ।
– কি বলেন, আমার কাছে তো এখন প্রিন্ট করানোটা আরও কঠিন কাজ মনে হচ্ছে।
– হুম, পোস্টারের জন্য তো বড় প্রিন্টার লাগবে।
– হ্যা।
– দাঁড়ান দেখি।
কিছুক্ষন গুগলে সার্চ দিয়ে দুইটা দোকানের সাজেশন দিল। তারপর আফসানাকে মোবাইলে দেখিয়ে দিল কিভাবে যেতে হবে।
কনফারেন্সের মেইন দুইদিন বেশ দৌড়াদৌড়ি গেছে। প্রতিদিনই হোটেলের রুমে আসতে আসতে অনেক দেরী। আর টায়ার্ড হয়ে কোনমতে ফ্রেশ হয়ে ঘুম। শেষদিন সবকিছু গুছিয়ে বিকালের আগে যা একটু সময় পাওয়া গেছে। আফসানা ভাবল বীচ থেকে ঘুরে আসবে।
রীসোর্ট থেকে বেরিয়েই সমুদ্র সৈকত। হাটতে হাটতে লেগিয়ান বীচের ধারে এসে পড়ছে। আকাশটা বেশ পরিষ্কার থাকায় সমুদ্রের পানি নীল হয়ে গেছে।
– আরেহ আপনি এখানে ?
– হ্যা, আমি কাছেই থাকি।
– থাকেন মানে?
– থাকি মানে, এখানে একটা airbnb নিয়ে থাকি।
– আপনি না ঘুরতে এসেছেন?
– হ্যা, ঘুরতে আসছি। ঘুরতে আসলে কি থাকা যাবেনা?
– না না, তা না। কতদিন ধরে আছেন এখানে?
– সপ্তাহখানেক হল এসেছি। মাসখানেক থাকব।
– এতদিন ধরে থাকবেন?
– আমি আসলে এখান থেকে কাজ করি। আমার জবটা রিমোট জব। এই জন্য একটু সুবিধা।
– আচ্ছা। আপনি তো বেশ আরামে আছেন। জব করার উছিলায় ঘুরাঘুরি করতেছেন।
– সব সময় তো ঘুরাঘুরি হয়না। আজকে কাজ করতে করতে একটা জিনিস মিলতেছিলনা, এই জন্য মাথা খালি করতে হাঁটতে বের হইছি। আপনার প্লান কি?
– তেমন স্পেসিফিক কোন প্লান নাই। এখানে কিছুক্ষণ থাকব। তারপর উলুয়াতু মন্দিরের দিকে যাব। আপনি গেছেন নাকি?
– হ্যা, গিয়েছিলাম গত সপ্তাহে। জায়গাটা সুন্দর অনেক।
– আমিও শুনেছি এটা নিয়ে, দেখি কেমন লাগে।
– আপনার কনফারেন্স কেমন হল?
– ভালই হয়েছে।
– কিছু মনে করবেন না, আপনি কোন ভার্সিটিতে পড়াশুনা করতেছেন?
– বুয়েট থেকে।
– হা হা
– হাসতেছেন কেন?
– আপনি কোন ব্যাচ?
– আমরা কেবল পাস করে বের হয়েছি।
– আচ্ছা, আমি ‘০৭ ব্যচ।
– আরেহ তাই নাকি ভাইয়া।
– (মনে মনে) ধুর এভাবে ভাইয়া বলে ফেলল ! (অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখে) বাহ, এখন কি মাস্টার্স করতেছ? তুমি করে বললাম। কিছু মনে করনাই তো!
– আরেহ না না, সমস্যা নাই, আমরা তো ছোটই। হ্যা, মাস্টার্সের লাস্ট সেমিস্টার চলতেছে। কিভাবে কিভাবে যেন পেপারটা আক্সেপ্টেড হয়ে গেল। তাই এখানে আসছি।
– কিসের উপর পেপার ছিল?
– এইত, ন্যানোনিডল নিয়ে। আমরা আন্ডারগ্রাড এ থাকতে পার্টটাইম কাজ করেছিলাম একটা কোম্পানিতে। ওখানে কাজ করতে গিয়ে একটা টীমের সাথে পরিচয় হয়। ঢাকা ভার্সিটির একটা টিম আর বুয়েট মিলে এই রিসার্চটা করতেছে। টপিকটাতে বেশ মজা পেয়ে যাই। তারপর সেটাই মাস্টার্সের প্রোজেক্টে এ সিলেক্ট করেছিলাম।
– ভাই রে ভাই, কিভাবে পার!
– কই আর পারলাম, এত পড়ালেখা করে শেষ পর্যন্ত সুই বানাচ্ছি।
– সুইকে সুই বলে ছোট করে দেখার কিছু নাই।
– আপনি মাষ্টার্স করছেন?
– নাহ, আমি স্বল্পশিক্ষিত মানুষ, বেশী লেখাপড়ার সুযোগ হয়নাই :p
হাটতে হাটতে ওরা লাবনী পয়েন্ট থেকে একেবারে কলাতলী বীচে চলে এসেছে। ধুর, কি বলতেছি, লেগিয়ান বীচ থেকে কুতা বীচে চলে এসেছে।
– এই জায়গাটা দেখতে অনেকটা কলাতলী বীচের মত।
– সেটা আবার কোন বীচ?
– কক্সবাজারের একটা বীচ। আপনি কক্সবাজার গিয়েছেন?
– গিয়েছিলাম মনে হয় একবার। সে তো অনেক আগে। বুয়েট থেকে বের হবার পরপর মনে হয়। ও হ্যা মনে পড়েছে, কলাতলী বীচ। সবচেয়ে ময়লা বীচটা?
– তা অবশ্য ঠিক বলছেন। মানুষজন বেশী বেশী গিয়ে ময়লা করে ফেলেছে।
– এখানে সমুদ্রের ডেপথ একটু বেশী থাকার জন্য সমুদ্র সৈকত খুব একটা প্রশস্ত না। কলাতলীর ওখানে মানুষজনকে অনেক দুর পর্যন্ত যেতে দেখছি মনে হয়।
– হ্যা। এখানের বীচও তো কম ময়লা না। এর থেকে সেন্ট মারটিন এর বীচ অনেক সুন্দর।
– সেন্ট মারটিন গিয়েছিলাম আমাদের র্যাগ ট্যুরে।
– তাই নাকি?
– হ্যা, সেই ট্যুর। ওই সময়টা পুর্নিমা ছিল। আমরা বন্ধুরা সবাই মিলে বীচেই এক রাত পার করে দিছিলাম। আমার অবশ্য খুব বেশী কিছু মনে নাই। ব্যাচের কয়েকজন সবকিছু আরেঞ্জ করছিল দেখে আমরা বাকিরা দিব্যি আরামে ট্যুর দিছি। তখন আসলে বুঝতাম না যে ঘুরাঘুরি করতে কত মজা।
– ঘুরাঘুরি করতে কার না ভাল লাগে!
– ভাল লাগেনা এমন না। মানে ভার্সিটীতে থাকতে ঘুরার অনেক সময় ছিল, পোলাপান ছিল, ঘুরিনাই।
– ঘুরেননাই কেন?
– হলে বসে ঝিমাইছি। যা মিস হয়ে গেছে, গেছে। এখন সেগুলো পোষাতে হবে :p তোমাদের র্যাগ ট্যুর কই ছিল?
– সেন্ট মারটিন এই। আমি অবশ্য যেতে পারিনি।
– কেন?
– এমনেই
– এমনেই মানে! কেউ কি ইচ্ছা করে র্যাগ ট্যুর মিস করে নাকি!
– না, তা না।
– আরেহ ধুর, কি যে বলেন!
– র্যাগ ট্যুরে না গিয়ে করছ কি তাহলে?
– বসে বসে গান গাইছি।
– কি গান?
– আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে
– সেন্ট মার্টিনে তো বন নাই।
– কে বলেছে নাই, ছেড়া দ্বীপের ওইখানে একটু ঝোপঝাড় আছে, ওটারেই বন হিসেবে ধরেন।
– হা হা, হইল না, সুন্দরবন গেলে না হয় বলতে পারতা।
আফসানা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল তিনটার মত বাজে।
– আচ্ছা, আমি এখন উলুয়াতু মন্দিরের দিকে যাব। আপনি যাবেন নাকি?
– যাওয়া যায়, আমার এমনিতেও এখন কাজে মন বসবে না। তার থেকে ওখানে বসে সুর্যাস্ত দেখতে মন্দ হবে না।
কুতা বীচ থেকে উলুয়াতু মন্দির ট্যাক্সিতে ঘন্টাখানেকের রাস্তা। একা একা গেলে ভালই খরচ পরত। দুইজন হওয়াতে মোটামুটি কমই। চারটার একটু পরে ওরা পৌঁছুল। আজকে সন্ধ্যা হবে সাড়ে ছয়টার দিকে। হাতে প্রায় আড়াই ঘণ্টার মত সময় আছে।
ঢোকার মুখে টিকেট কাউন্টার। ট্যাক্সি ড্রাইভার টিকেট কেটে দিবে বলে টাকা নিয়ে গেল, একটু পরে আবার ফেরত আসল। কেচাক নাচ নামে একটা নাচ হবে। সেটার টিকেট আলাদা করে বিক্রি করতেছে। দেড় লাখ রুপিয়া। ওরা কিনবে কিনা জিজ্ঞেস করল।
– লাখ টাকার নাচ, দেখবা নাকি?
– দেখা যায়। আপনি দেখবেন?
– চল।
দুটো টিকেট কেটে ওরা মন্দিরের মধ্যে ঢুকল। মন্দির খোলা থাকে সাতটা পর্যন্ত। মন্দিরের ভিতরে হাটার রাস্তাটা পাহারের কিনার ঘেঁষে বেয়ে বেয়ে গেছে। একটা জায়গায় মোটামুটি ফাকা দেখে দাড়াল ওরা। আকাশের রংটা হলুদ আর লালের একটা মিক্স হয়ে গেছে। ওরা যেখানে দাড়িয়েছে, সেটা একটা চুড়া। আসলে পুরো মন্দির এলাকাটাই পাহাড়ের চুড়ায়। ক্লিফ ঘেঁষে রাস্তা বানানো, অনেক খাড়া ক্লিফ। লাফ দিলে ভাল একটা দড়ি ছাড়া বাঞ্জি জাম্পিং হয়ে যাবে। ক্লিফের আশেপাশে কিছুদুর পরপর কাগজী ফুলের ঝোপ। বিকালের হলদে আলোতে আফসানাকে দেখতে অন্যরকম লাগছে। আর তার সাথে পিছন থেকে গোলাপি ফুলগুলো, সব মিলিয়ে আলাদা একটা মায়া কাজ করতেছে। কাগজী ফুল দিয়ে দুটো ঝুমকা বানিয়ে দিলে মানাবে বেশ। মনের অজান্তেই গুনগুন করে একটা সুর চলে আসল –
অই দুর পাহাড়ে, লোকালয় ছেড়ে দুরে
মন কেড়েছিল এক দুরন্ত মেয়ে সেই কবে
হিমছড়ীর বাঁকে
– গান গাচ্ছেন নাকি?
– হ্যা, অনেক বড় শিল্পী তো, প্রতিভা চেপে রাখা যাচ্ছেনা।
– দেখছেন, এই জায়গাটা দেখতে হিমছড়ির মত না?
– আরেহ তাইতো, ঠিক বলছ।
– চলেন, কেচাক এর টাইম হয়ে গেছে। আগে আগে না গেলে ভাল সীট পাওয়া যাবেনা।
কেচাক নাচ দেখতে এইখানে অনেক লোক আসে। জিনিসটা রামায়ণের কাহিনীর উপর ভিত্তি করে বানানো। হনুমানের নেতৃত্বে একদল বানর থাকে। বানরের দল রাবনের সাথে যুদ্ধ করে রামকে জিতিয়ে দেয়। প্রায় শখানেকের মত পার্ফরমার। স্টেজ এ ওরা যেখানে বসেছে, সেখান থেকে দুরে তাকালে সমুদ্র। ক্লিফ এর মাথায় একটা “Door of heaven” এর স্ট্যাচু। Door of heaven হল দুইটা বড় কপাটের মত, মাঝখান দিয়ে খোলা। ইন্দোনেশিয়াতে মোটামুটি সব জায়গায়ই এইটার ছোট/বড় ভার্শন দেখা যায়। তো ওইটা বরাবর তাকালে সমুদ্রের উপর সুর্যাস্ত দেখা যাচ্ছে।
নাচের মাঝখানে কয়েকটা মশালে আগুন ধরায়ে দিল। সুর্য ডোবার পরে যখন একটু অন্ধকার হয়ে গেল তখন পুরো ব্যাপারটাতে একটা জংলী ভাব চলে আসল। আদিম যুগে মানুষজন আগুন জালায়ে চারপাশে যেমন নাচত, ওইরকম। সব মিলিয়ে সেট আপটা সুন্দর, ভাল লাগার মত। পুরো সময়টা বেশ ভালই কাটল।
মন্দির থেকে বের হয়ে, ওরা চিন্তা করছিল কোথায় খাবে। একবার চিন্তা করল উলুয়াতুর আশেপাশে কোথাও বসে খাবে। পরে মনে হল একবারে রিসোর্টের কাছে গিয়েই কোন একটা জায়গায় বসবে। একটা ট্যাক্সি করে রওয়ানা দিল কুতা বীচের দিকে। মাঝপথের রাস্তা ঢাকা চিটাগং হাইওয়ের মত, একটু চাপা আর কি। অন্ধকার হয়ে গেছে যদিও, তারপরও দুই পাশে দোকানপাটের লাইটের আলো আছে। কুতা বীচের কাছে আসতে আসতে রাস্তা ফকফকা, দেখে মনেই হচ্ছেনা রাত। অবশ্য এতক্ষণে ওরাও টের পেল পেট খিদেয় চো চো করছে।
–x–
সুপ্রিয় দর্শকমন্ডলী, এতক্ষণ দেখছিলেন এ সপ্তাহের নাটক “আজ আফসানার ফ্লাইট”। আজকে এতটুকুই রইল। এখন শুরু হবে রাত দশটার সংবাদ 🙂