"We human being, always find a solution, maybe not today, but if you really want to solve a problem, there’s always a way" – Ma Yun @ Stanford, 2013
Tag Archives: Story

পহেলা বৈশাখ – ১৪২৪

by Md Imran Hasan Hira

bengali-new-year-1424

( আজ পহেলা বৈশাখ। বাবা মা এর সাথে ঘুরতে বেরিয়েছে জারিফ)
: এইটা কোথায় নিয়ে আসলা?
: তুমি না বলছিলা মেলায় যাবা, এইটা বৈশাখী মেলা, আব্বু।
: আশেপাশে এত মানুষ কেন?
: বছরের প্রথম দিনে এরা সবাই আনন্দ করতে নেমেছে, তাই এত মানুষ।
: আনন্দ করতে এত মানুষ লাগে?
: হা হা, একাও মজা করা যায়, তবে সবাই মিলে থাকলে অনেক বেশী মজা করা যায়।
: সবাই মিলে থাকলে বেশী মজা কেন হয়?
: তুমি যখন নানাবাড়ি/দাদাবাড়ী বেড়াতে যাও, তখন যেররকম অনেক মজা হয়, অনেকটা সেরকম।
: আচ্ছা, নানাবাড়ি/দাদাবাড়ী আবার কবে যাব?
: যাব আব্বু, সামনের ছুটিতেই যাব।
: কি শুরু করছ তোমরা দুইজনে! এইসব গুরুগম্ভীর আলোচনা রাখ, আস ছবি তুলি 🙂 


বেশ পরিষ্কার একটা সকাল

by Md Imran Hasan Hira

আজকের সকালটা বেশ পরিষ্কার। শোবার ঘরের পর্দাটার ফাঁক দিয়ে আলতো করে সকালের মিষ্টি রোদটা এসে বিছানার পাশের টেবিল ল্যাম্পের উপর পড়ছে। গতদিনও সকালে মিষ্টি রোদ ছিল, কিন্তু পর্দা টানানো ছিল বলে আজকের মত এত পরিষ্কার ছিলনা। বেশ কিছুদিন ধরে শীত শীত ভাবটা একটু বেশী। কম্বল ছেড়ে উঠতেই ইচ্ছা করে না।
আরেহ, এত সকালে ঘুম থেকে উঠে গেছ!
সু প্রভাত!
বাব্বাহ! বেশ খোশ মেজাজে আছ মনে হচ্ছে। ঘুম থেকে উঠেই সাহিত্য শুরু করে দিয়েছ!
সাহিত্য কই দেখলে, অনেকদিন পর একটা জম্পেশ ঘুম দিলাম।
হুমম, অন্যান্য দিন ঘুমের ভিতর কেউ বিরক্ত করে বুঝি!
তা তো একটু করেই।
চা খাবে?
নাহ, চা খাব না।
কফি বানিয়ে দেই?
কফি পেলে মন্দ হয় না। আচ্ছা, আজকে বরং আমিই কফি বানাই।
(
কিচেনের ক্যাবিনেটগুলাতে কিছুক্ষণ খুঁজাখুঁজির পর )
এই, নেসক্যাফের কৌটাটা কই রেখেছ?
হয়েছে! তুমি বানাবে ছাই, একটা কৌটাই খুঁজে পাচ্ছনা! দেখি দাও আমাকে।
এই জন্যই তো তুমি এত্তগুলা ভাল।
আর ঢং করতে হবেনা। আমি আছি বলে জিনিসগুলো অন্তত চাইলে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে, তোমার মত আউলাঝাউলা হলে তো খবরই ছিল।
আহা, তুমি সবকিছু যেভাবে গুছিয়ে রাখ, তাতে আমার কফির কৌটা খুঁজার কি দরকার! খালি তোমাকে খুঁজে পেলেই হল।
তা আর বলতে। এই, হচ্ছেটা কি!
– 
কি হচ্ছে আবার, কিছুই হচ্ছে না।
একদম শয়তানি করবানা এখন।
আচ্ছা, ঠিক আছে করবনা।
কফি বানিয়ে দিচ্ছি, তারপর নাশতা খেয়ে সোজা অফিসে চলে যাবা।
জো হুকুম। তুমি বেরোবে না ?
হ্যা বের হব তো। একসাথেই বের হব।

বাসার সামনের কাগজীফুলের ডালে ফুলগুলো আজকে কড়া গোলাপি রঙ ছড়িয়ে বসে আছে। দরজা খুলে ফুলগুলো দেখলে যে কারও মন ভাল হয়ে যেতে বাধ্য। তার উপর আবার পাশেই রজনীগন্ধা ফুটবে কিছুদিন পরে। সবকিছু সামলানোর পরে আবার কি সুন্দর করে এই কাজগুলো যে ও করে!


বাগানবিলাস

by Md Imran Hasan Hira

জুবিলী স্কুলের এইটের ক্লাস। একটু পরেই অঙ্ক ক্লাস শুরু হবে। স্যার আসলে পরে ক্লাসে টু শব্দ পর্যন্ত করা যাবেনা। স্যারের নামটাও সেরকম, শীতল কানাই। নাম শীতল হলে কি হবে, হাতে যে বেত থাকে, সেটার বাড়িতে পিঠ পুড়ে যেতে সময় লাগে না। আর যেদিন বেত থাকেনা, সেদিন অবশ্য অন্যরকম শাস্তি। তেমন কিছু না, খালি কান ধরে স্কুলের গেটে ছুটির সময় দাড়িয়ে থাকতে হবে। দুনিয়ার আর কোথাও এইরকম অপমানের শাস্তি আছে কিনা কে জানে। ক্লাস এইট বলে কি মান সম্মান নাই! ফাইভ সিক্সের পোলাপানরা যাইতে যাইতে দেখবে যে কান ধরে দাড়িয়ে আছে, কি লজ্জা!

স্যার ক্লাসে ঢুকেই দেখল পিছনের বেঞ্চে শয়তান দুইটা লাফাইতেছে। নরমাল টাইম হইলে সোজা পিছনে গিয়ে বেত দিয়ে মাইর দেওয়া শুরু করত। আজকে মতি-গতি সুবিধার না। সামনের বেঞ্চে মাঝ বরাবর কবির আর রায়হান বসছিল। কষায়া থাপ্পড় দিল দুইটারে – “তোরা ক্লাসে থাকতে ক্লাসের এমন অবস্থা কেন!” ক্লাসের ফার্স্ট আর সেকেন্ড ক্যাপ্টেনকে থাপ্পড় খেতে দেখে পুরা ক্লাস তব্দা মেরে গেল।

ছুটির ঘণ্টা বাজছে। স্কুলের সবাই হুড়মুড় করে গেট দিয়ে বের হচ্ছে. আর বের হওয়ার সময় গেঁটের পাশে সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের দেখে একটু করে থামতেছে। ওমা, কয়েকজনের কাঁধে দেখি ব্যাজও আছে। এইটা শীউর কানাই স্যারের কাজ, উনার হাত থেকে ক্যাপ্টেনদেরও রেহাই নাই।
: কিরে এত নড়োস কেন ?
: এইখানে মশা আছে, তোরে কামড়াইতেছে না?
: ধুর ব্যাটা, কিসের মশা! এখান থেকে যাইতে পারলে বাঁচি। আগেই কইছিলাম যে স্যাররে ডাকি, তুই ই তো আটকাইয়া দিলি।
: আমিতো মনে করছি যে থাইমা যাইব, এমনে যে হুট কইরা স্যার আইয়া পড়ব কে জানত।
: স্যার কিন্তু ওই রুম থেইকা তাকাইয়া আছে। বেশি নড়িস না, নাইলে গার্লস স্কুল ছুটি হওয়া পর্যন্ত দাঁড়াইয়া থাকন লাগব।

পায়রা নদীর পাশেই স্কুল। স্কুলের গেট দিয়ে বের হয়ে পুর্ব দিকের যে রাস্তাটা আছে ওটা ধরে কিছুদূর গিয়ে একটা ব্রিজ পার হলেই জুবিলী রোড। রায়হানদের বাড়ি ওই জায়গার কাছেই। আর কবিরদের বাসা একটু দুরে। জুবিলী রোড ধরে বেশ কিছুদুর গেলে কবরস্থান। কবরস্থানের পাশে সমতা সড়ক দিয়ে সোজা ভিতরে যাওয়ার পরে একটু ডানে মোড় নিলেই একটা পুকুর দেখা যায়, ওটার পাশেই কবিরদের বাসা। আসলে মেইন রাস্তা দিয়ে ঢুকে সোজা গেলেই কয়েকটা বাড়ি পরে।

স্কুল ছুটির পরে প্রতিদিন দুই বন্ধু জুবিলী রোড ধরে হাটতে হাটতে বাসায় যায়। যদিও আজকে মেজাজ খারাপ। তাই যাওয়ার পথে নদীর পারে ঘাসের মধ্যে দুইজনে বসে পড়ল। পাশে ইটের স্তুপ ছিল, রায়হান একটা খোয়া নিয়ে জোরে দুরে মারল, টুউউউউপ করে একটা আওয়াজ হল।
: এইটা কোন কাজ করল স্যার! শয়তানি করল ওরা, আর মাইর খাইলাম আমরা।
: স্যারের মাথা ঠিক নাই, আজকে নিউ টেনের ক্লাসেও নাকি তিনজনেরে ধরছে।
: আরে দাড়া করায়া রাখছে সেইটা তো সমস্যা না। স্কুল থেকে যাওয়ার পথে রুবি (রায়হানের ছোটবোন) দেখছে। এখন বাসায় গিয়া আম্মাকে বইলা না দিলেই হয়।
: টেনশন লইস না। ছুটির সময় এত পোলাপানের ভিড়ে দেখবি তোরে খেয়ালই করেনাই। ল যাই, এমনেই দেরী হইয়া গেছে।

বিকালের আলো পড়ে এসেছে। কবির হাটতে হাটতে মেইন রোড থেকে সমতা সড়কের গলিতে ঢুকল। মুদির দোকানের কাছাকাছি আসতেই দেখল জাকির সাহেব বেরুচ্ছেন বাসা থেকে । পাঞ্জাবী পরা, হাতে জায়নামাজ, মাগরিবের জন্য মসজিদে যাবেন মনে হচ্ছে। কবির সালাম দিল, আসসালামু আলাইকুম চাচা। কিন্তু জাকির সাহেব শুনেনাই বোধ হয়। কবির ভাবল, ধুর, সালাম দিলাম, শুনলই না। এমনেই অঙ্ক ক্লাসের পর থেকে মন খারাপ। হাটতে হাটতে কিছুদূর গিয়ে মুদির দোকান পার হয়ে ডানে মোড় নিল। এইখানেই বাড়িটা। কনট্রাক্টরের বিল্ডিং বলে এলাকার লোকজন।

বাড়ির সামনে দিয়ে প্রায় চলেই যাচ্ছিল, হঠাত করে দু পা পিছনে এসে দোতলার জানালার দিকে তাকাল। বেণু, খুব মনোযোগ দিয়ে কি যেন পড়ছে। জানালাটা অর্ধেক খোলা। গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিনই যাওয়ার সময় কবিরকে এইখানে থামতে হচ্ছে। থামতে হয় বললে ভুল হবে, আসলে দূর থেকে জানালাটার দিকে তাকালে অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করে। কিন্তু মানুষজন কি বলে আবার, এইখানে বেশিক্ষণ দাঁড়ানো যাবেনা। কবির বাসার দিকে হাঁটা দিল, আর ভাবতে লাগল প্রতিদিন এই সময় জানালায় কি করে মেয়েটা!

কনট্রাক্টরের বাড়িটাতে কেমন জানি একটা মায়া আছে। মেইন গেটের ছাউনির পাশ দিয়ে একটা কাগজী-ফুলের ঝোপ উঠেছে। যেটার একটা ডাল দোতলায় জানালা পর্যন্ত চলে গেছে। এর ফুলগুলোও বেশ সুন্দর, গাঢ় গোলাপি রঙের। অবাক লাগে দেখতে। সারা বছরই থাকে। ভাল একটা নাম আছে এই ফুলের, বাগানবিলাস না কি যেন।


টিপ টিপ বৃষ্টি

by Md Imran Hasan Hira

আজ অফিসে সায়মা’র প্রথম দিন। সে অনেক আগের কথা। হালকা হালকা বৃষ্টি পড়তেছে। প্রথম দিনের ঝক্কি ঝামেলা শেষ করে সায়মা IPVision অফিস থেকে কেবল বের হবে। নাহ, ভুল করে আজকে ছাতাটা আনা হয়নি। সকাল বেলা তো কড়কড়ে রোদ ছিল, কে জানত এখন এইভাবে বৃষ্টি নামবে। বৃষ্টি একটু থামি থামি ভাব দেখিয়ে আবার অঝোড়ে পরতে শূরু করল।

ওয়েব টিম থেকে ইব্রাহীম আজকে একটু আগে ছুটি পেয়েছে। ভেবেছিল তারাতারি বাসায় গিয়ে কয়েকটা কাজ সেরে নিবে। লিফট দিয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমে সাইকেলের লক খুলতে খুলতে দেখে, বাইরে যে বৃষ্টি তাতে সাইকেলে গেলে কাকভেজা হওয়া ছাড়া উপায় থাকবেনা। তাছাড়া গত দুইদিন ধরে একটু কাশিও আছে। ভাবল রিকশায় যাবে। সাইকেল জায়গামত রেখে গেট দিয়ে বাইরে বের হয়ে এসে একটা রিকশা দেখতে পেল। ডাক দিল “মামা যাবেন ?” ওদিক থেকে একই সময় শুনতে পেল আরেকজন বলছে “এই খালি, যাবেন?”

আরেহ, এই মেয়েটাকে তো আজকে সকালেই অফিসে দেখেছে সে। লিফটে একই সাথে উঠছিল। একটা হাই বলেছে শুধু। নতুন এসেছে বোধ হয়। জিজ্ঞেস করল
: আপনি কোথায় যাবেন?
: মালীবাগ।
: আপনার আপত্তি না থাকলে চলেন, একসাথে যাই।
: (অনেকক্ষন ধরে কোন রিকশা পাচ্ছিলনা, তাই খানিকটা চিন্তা করে) আপনার বাসা ওদিকেই নাকি?

সুপ্রিয় দর্শকমন্ডলী, আপনারা দেখছিলেন বর্ষার প্রথম দিন উপলক্ষে আমাদের বিশেষ প্যাকেজ নাটক – “টিপ টিপ বৃষ্টি”। নাটকের বাকি অংশ দেখবেন বিজ্ঞাপন বিরতির পর।

–x–

(দর্শকদের আকুল আবেদনের প্রেক্ষিতে পরিমার্জিত প্লট)
দিপল জানালা দিয়ে দেখল যে বৃষ্টি অনেক বেশি। আজকে এমডি স্যারের সাথে একটা জরুরী মিটীং হওয়ার কথা। তাই সবাই নেমে গেলেও সে বসে আছে। হঠাত করে এমডি স্যারের পিএ এসে জানাল “আজকে মিটিং হবে না, আপনারা বাসায় যেতে পারেন। আর বাইরে তো বৃষ্টি, এমডি স্যার আপনাদের জন্য একটা মাইক্রো ব্যবস্থা করতে বলেছেন। সেটা নিচে আছে, আপনাদেরকে বাসায় পৌছিয়ে দিবে”। খুশিতে কম্পিউটার বন্ধ করে ওরা নিচে নামল, অফিসের গাড়িতে করে বাসায় যাবে বলে। একজন কলিগ আগে চলে যাওয়াতে মাইক্রোতে একটা সীট ফাকা আছে।

অফিস থেকে বের হওয়ার সময় দিপল গাড়ির ভিতর থেকে দেখল যে, আজকে ওর সার্ভার টীমে যে নতুন মেয়েটা জয়েন করছে সে দাঁড়িয়ে আছে। ভাবল আরে ওর বাসা তো মালীবাগ, সকালে বলছিল। মাইক্রোর রুটেই পরছে। মেয়েটা বৃষ্টির মধ্যে কষ্ট করে দাঁড়িয়ে আছে, ডাক দেই। সবাই একসাথে যাওয়া যাবে। দীপল বলল –

: এই সায়মা, বাসায় যাচ্ছ ?
: জ্বী ভাইয়া।
: গাড়িতে এসো, আমরা তো অই রুটেই যাব, তুমি রেলগেটে নেমে যেও।
: অনেক থ্যাঙ্কস দিপল ভাইয়া। একটু দাড়ান। আচ্ছা ভাইয়া, আপনি তাহলে রিকশা নিয়েই যান।

–x–

(টিপ টিপ বৃষ্টি – পর্ব তিন)
সাদিয়া ল্যাব ক্লাশে। সবার এক্সপেরিমেন্ট মিলে গেছে, কিন্তু স্যারের যেন কি একটা পছন্দ হয়নি, কতক্ষন ধরে সবাইকে লেকচার দিচ্ছে। ক্লাশের বাকিদের মেজাজ ব্যপক খারাপ। ক্লাশ শেষ করে দিলেই তো হয়, এক্সটেন্ড করার আর টাইম পাইলনা! সাদিয়া’র অবশ্য খারাপ লাগছে না। আজকের ল্যাবের টীচারটা বেশ হ্যান্ডসাম। কয়েকবার চোখাচোখিও হয়েছে। ও অবশ্য এমন ভাব করেছে যেন স্যারের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে।

বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ভালই রোদ ছিল বলে সাইকেলটা সাথে করেই বুয়েটে এসেছিল। আজ সায়মা’র প্রথম অফিস। বিকালে একসাথে আড্ডা দেওয়ার কথা আছে। সাদিয়া ল্যাব শেষে সায়মা’র অফিসের দিকে রওয়ানা দিল। পথিমধ্যে ঝুম বৃষ্টি। কি আর করা, থেমে গেলে আবার সায়মা চলে যাবে। ভাগ্যিস ব্যাকপ্যাকে একটা রেইনকোট ছিল। সেটা গায়ে জড়িয়ে আবার সাইকেলে প্যাডেল চালালো।

আইপিভিশন কোম্পানিটা হয়েছে বেশীদিন হয়নি। কয়েক বছর মাত্র, এর মধ্যেই বেশ লোকজন রিক্রুট করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ফ্লেক্সিবল অফিস আওয়ার, অফিস প্রেমাইজেই খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা, থাকার জন্য ডর্মিটরি – ভালই সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। গতদিন হ্যাংআউটে সায়মাই বলছিল এগুলো। সাদিয়া নিজেও অবশ্য চলে যাবে কিছুদিন পরে বিদেশে। ভাল একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরিটা কনফার্ম হয়ে গেছে। পরীক্ষা শেষ হতে আর কিছুদিন বাকি। বিদেশে চলে গেলে সায়মার সাথে এভাবে প্রতিদিন বিকালে সামনা সামনি বসে আড্ডা দিতে পারবেনা। সাইকেল চালাতে চালাতে এগুলো মাথায় ঘুরছিল। মনটা একটু নষ্টালজিক হয়ে গেল। ততক্ষনে অফিসের প্রায় সামনে চলে এসেছে।

–x–

বৃষ্টি কমে গেছে। ইব্রাহীম চিন্তা করল খামোখা সাইকেলটা অফিসে রেখে যাবে, তারচে ওটাতে করেই বাসায় যাওয়া যাক। এই ভেবে সে যখনই সাইকেল নিয়ে গেট দিয়ে বের হতে যাবে, আচমকা আরেকটা সাইকেল এসে গায়ের উপর পড়ল। ঘটনার আকস্মিকতায় ইব্রাহীম এবং সাদিয়া দুজনেই অবাক।
: সর‍্যি ভাইয়া, একেবারেই খেয়াল করিনি।
: তুমি নিজে ঠিক আছ তো ?
: আমার তেমন কিছু হয়নি। আপনার তো দেখি সামনের চাকা ভেঙ্গে গেছে।
: হুমম। সমস্যা নেই।
: তুমি কই যাচ্ছিলা ?
: কোথাও না। সায়মা’র সাথে দেখা করব।
: সায়মা কে ?
: আমার বান্ধবী, আজকেই জয়েন করছে আপনাদের অফিসে।
: ওহ, বুঝতে পারছি। ও তো কিছুক্ষণ আগে বাসায় চলে গেল বোধ হয়।
: কি বলেন! আমাকে বলল এখানে আসতে, এখন ভুলে গেছে!
: আচ্ছা, তুমি ফোন দিয়ে দেখ। আমি বাসায় যাই।
: আপনার বাসা কোথায় ?
: মালিবাগের চৌধুরী পাড়া।
: ওয়াও, সায়মা’র বাসাও ওইদিকে। চলেন, একসাথে যাই।
: আচ্ছা। তুমি সাইকেলে করে চলে যাও। আমার তো হেঁটে হেঁটে যাওয়া লাগবে।
: আরেহ, টেনশন নিয়েন না, এক জায়গায়ই তো যাব। হাতিরঝিল দিয়ে হেটেই চলেন।

বৃষ্টি থেমে গেছে। ওরা দুজন সাইকেল ঠেলতে ঠেলতে রওয়ানা দিল। নিকেতনের গেট পার হয়ে, হাতিরঝিলের পাশ দিয়ে বেশ সুন্দর রাস্তা। বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তার পাশের সবুজ ঘাসগুলো যেন আরও বেশি সবুজ হয়ে গেছে। ইব্রাহিমের এই জায়গাটা বেশ পছন্দের। অফিস শেষ করে বিকালে এখান দিয়ে যেতে ভালই লাগে।

সাদিয়ারও যে এই ধরনের পরিবেশ ভাল লাগে না তা না। সাইকেল ভেঙ্গে দিয়েছে দেখে একটু মন খারাপ আর কি। তবে, কিছুক্ষন বাদে হাটতে হাটতে রামপুরার দিকের আকাশে হালকা করে যে রংধনুটা উকি দিচ্ছে, সেটার দিকে তাকিয়ে মনটা ভাল হয়ে যেতে সময় লাগল না।
(অসমাপ্ত)


দুষ্টুর হাড্ডি

by Md Imran Hasan Hira

: বাবা, কি কর?
: এইতো আম্মু, কাজ করছি।
: জানো, স্কুলে স্যার আজকে একটা নতুন হোমওয়ার্ক দিয়েছে।
: কি?
: স্যার বলেছে যে জীবনের লক্ষ্য নিয়ে বিদেশী বন্ধুর কাছে চিঠি লিখতে হবে।
: তাই নাকি! তোমার আবার বিদেশী বন্ধু হল কবে?
: এখনও হয়নি, চিঠি লিখলে পরে হবে।
: হা হা, তা তোমার জীবনের লক্ষ্য কি?
: সেটা নিয়েই তো চিন্তায় আছি
: তুমি কি ডাক্তার হতে চাও?
: সবাইই তো ডাক্তার হতে চায়। জিনিয়া বলছে সে ডাক্তার হবে। অন্তরাও।
: কেন, ডাক্তার ছাড়া কি আর কিছু হবার নেই? ডাক্তারই হতে হবে কেন? তুমি কি মীনা কার্টুনের মত সিনেমার নায়িকা হতে চাও?
: উহু, না
: কেন নায়িকা হওয়া তো ভাল। তোমাকে টিভিতে দেখাবে। বিলবোর্ডগুলাতে তোমার ছবি থাকবে। তোমাকে কত লোক চিনবে smile emoticon
: তুমি না সেদিন বললে যে নতুন জামাটাতে আমাকে একেবারে প্রিন্সেস এর মত লাগছে। তাহলে আবার নতুন করে নায়িকা হব কেন!
: তাহলে এক কাজ কর, তুমি জার্নালিস্ট হও।
: অইযে টিভিতে সাংবাদিক আছে, ওদের কথা বলছ? খবর নেওয়ার জন্য ক্যামেরা হাতে দৌড়ে বেড়ায়।
: হ্যা, কত কত জায়গায় যায়। তুমি না অনেক ঘুরতে যেতে চাও, সাংবাদিক হলে সারাদিন ঘুরে বেড়াবা।
: উমমম
: কি পছন্দ হলনা? তাহলে তুমি প্রধানমন্ত্রী হও।
: প্রধানমন্ত্রী! সেতো অনেক বড় মানুষ। আমি পারব না।
: পারবেনা কেন ? এইটা তো সোজা, তোমাকে অবশ্য অনেক মানুষের সাথে মিশতে হবে, কথা বলতে হবে। ওদের ভাল মন্দ বুঝতে হবে। কোথায় কিভাবে কি করলে সবাই মিলে ভাল একটা কাজ করা যায় সেটা ভাবতে হবে।
: থামোতো, সেই কতক্ষন ধরে কি কি সব বলেই যাচ্ছ। হোমওয়ার্কে এগুলো কিভাবে লিখব!
: আচ্ছা, আগে একটা ঠিক করে ফেল, তারপরেরটুকু দুজন মিলে বের করে ফেলব।
: নাহ একটাও ভাল লাগছে না। মানে কি লিখব সেটাই তো বুঝতেছিনা।
: তুমি আগে দেখ কোনটা তোমার ভাল লাগতেছে। নিচতলার শান্তা কি লিখেছে ?
: স্কুল থেকে আসার সময় জিজ্ঞেস করেছিলাম। বলতেছিল ও নাকি ইঞ্জিনিয়ার হবে।
: (পাশের রুম থেকে হোম মিনিষ্টারের হুঙ্কার) হাহ! তোমার আর ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে না। বাসায় এক ইঞ্জিনিয়ার নিয়েই পারিনা, আরেকজন আসলে তো কথাই নেই। দেখা যাবে বাবার মত মেয়েও সারাদিন কম্পুটার নিয়ে পরে থাকবে।
: আহা, ইঞ্জিনিয়ার হওয়া ভাল তো। ওরা যদি ভাল ভাল বাড়ি গাড়ি না বানাত তাহলে থাকতে কোথায়, চড়তে কি! আর সব ইঞ্জিনিয়ার তো কম্পিউটারের সামনে বসে থাকে না। সে যাই হোক, আম্মু তুমিতো বিজ্ঞানীও হতে পার। নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করবে। সারা বিশ্বের মানুষ সেটা জানবে, কত্ত বড় হতে পারবে!
: আচ্ছা বাবা, সবাই বলে পড়াশুনা করে অনেক বড় হতে হবে। বড় হয়ে আসলে কি হবে ?
: বড় হয়ে অনেক বড় চাকরি করবে, ভাল জায়গায় থাকবে, আরাম আয়েশ করবে।
: আরাম আয়েশ করে কি হবে?
: আরামে থাকলে তুমি আরও বেশি কাজ করার শক্তি পাবে।
: সেটাতো বুঝলাম। কিন্তু এত এত কাজ করে হবে টা কি আসলে!
: তুমি কাজ করলে সেটা মানুষের অনেক উপকারে আসবে। সবাই মিলে তখন পৃথিবীটাকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
: পৃথিবী এগিয়ে গেলে কি হবে ?
: পৃথিবী এগিয়ে গেলে… ইয়ে, দেখতো আম্মু অই রুমে কি করছে… আমি খুঁজে বের করি পৃথিবী এগিয়ে গেলে কি হয়।
: বাবা তুমি না! কিছু না পারলে সবসময় এইরকম ইয়ে ইয়ে কর…


Theme by Ali Han | Copyright 2025 Md Imran Hasan Hira | Powered by WordPress